চীন ভ্রমণে যাচ্ছেন? জেনে নিন উল্লেখযোগ্য কিছু স্থানের কথা
চীন ভ্রমণে যাচ্ছেন? জেনে নিন উল্লেখযোগ্য কিছু স্থানের কথা
সাবেরা খাতুন
চীন দেশটি ভ্রমণের জন্য চমৎকার স্থান। এখানকার পুরাতন শহর, জঙ্গল, মন্দির, ধান ক্ষেত, পাহাড় ও অপূর্ব জলপ্রপাত দেখে মনে হয় যেন কোন শিল্পীর করা নকশায় তৈরি হয়েছে দেশটি। ৭০০ বছর আগে অভিযাত্রী মার্কোপোলোর লেখার মাধ্যমে চীন বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হয়। এশিয়ার বৃহত্তম এই দেশটি অদ্ভুত ও রহস্যময়তার মূর্ত প্রতীক। চীনের উল্লেখযোগ্য কিছু দর্শনীয় স্থানের কথাই জানবো আজ।
১। চীনের প্রাচীর
বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাচীর ‘দ্যা গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’ চীনের প্রতীক। এটি প্রাচীন আত্মরক্ষামূলক স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। পাহাড়ের উপরে নির্মিত এই প্রাচীরটি ঘুরে দেখা বেশ শ্রমসাধ্য হলেও চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এটি বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি। এটি চীনের পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। যার দৈর্ঘ্য ৫০০০ কিলোমিটার। তবে এই প্রাচীরের সবচেয়ে সংহত ও সংরক্ষিত অংশটি রাজধানী বেইজিং এর কাছাকাছি অবস্থিত।
২। ট্যারাকোটা আর্মি
ট্যারাকোটা আর্মি বা পোড়ামাটির তৈরি সৈন্য মূর্তি গুলো ২০০০ বছর মাটির নীচে ছিল। ১৯৭৪ সালে কৃষকেরা খনন কাজের মাধ্যমে এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি উন্মোচিত করে। ১৯৮৭ সালে এটি বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ৪৭৫-২২১ খ্রিষ্টপূর্বের শত শত সৈনিকের এই মূর্তিগুলো তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ তারাই ঐক্যবদ্ধ চীন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলো। এখানে ৮০০০ সৈন্য মূর্তি আছে যাদের দেখলে জীবন্ত মনে হয় এবং ১৩০ টি রথ আছে। এই মূর্তিগুলোর একটির সাথে অন্যটির চেহারার মিল নেই। এই নির্মাণের দক্ষতা দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই।
৩। নিষিদ্ধ নগরী
বেইজিং এর এই শহরটি ‘প্রাসাদের শহর’ নামে পরিচিত ছিল যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ করতে পারতোনা। মিং ও কিং এবং পুই রাজবংশের সম্রাটদের বাসস্থান ছিল এই প্রাসাদ। এটি নির্মাণ করা হয় ১৫শ শতকে। ১৯১২ সালে সর্বশেষ সম্রাট সিংহাসন ত্যাগ করে। এটি একটি দেয়ালঘেরা কমপ্লেক্স এবং পরিখা দ্বারা পরিবেষ্টিত। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম জটিল প্রাসাদ। কথিত আছে এখানে ৯৮০টি ভবন ও ৯৯৯৯ টি কক্ষ আছে। এই স্থানটির ভিড় দেখলেই বুঝা যায় এটি বেইজিং এর সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা।
৪। লি নদী
গুইলিনে অবস্থিত লি নদী শিল্পীদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হন চীনা চিত্রশিল্পী ও কবিরা। গুইলিন ও ইয়াংশু এর মধ্যকার লি নদীর ৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশটিই সবচাইতে সুন্দর। নদী বরাবর চমৎকার পাহাড়, খাড়া বাঁধ, গ্রাম, চাষের ভূমি ও বাঁশের উদ্যান এই অঞ্চলটিকে অনন্য সুন্দর করে তুলেছে। আমেরিকার ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনে পৃথিবীর ১০টি ওয়াটারি ওয়ান্ডারের তালিকায় লি নদীকে রাখা হয়।
৫. জায়েন্ট পান্ডা
চীন ভ্রমন অপরিপূর্ণ থেকে যাবে যদি পান্ডাদের দেখতে না যান। জায়েন্ট পান্ডার হোমটাউন হিসেবে পরিচিত চীনের সিচুয়ান প্রদেশের চেংদু শহর। চেংদু পান্ডা ব্রিডিং এন্ড রিসার্চ সেন্টারে প্রাকৃতিক পরিবেশে খুব কাছ থেকে এই কিউট প্রানিটিকে দেখার সুযোগ আছে। এখানে প্রায় ৮০টির মত পান্ডা রয়েছে। চেংদু পান্ডা সেন্টারটি শহরের উত্তরে অবস্থিত। বাইফেনেগক্সিয়া পান্ডা বেজ এ অনেক বেশি পান্ডা আছে। ডুজিয়াংইয়ান পান্ডা ভেলী ও বাইফেনেগক্সিয়া পান্ডা বেজ এ আপনি ভলান্টিয়ার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে পান্ডাদের কাছাকাছি যেতে পারেন।
চীনের আরো কিছু দর্শনীয় স্থান হচ্ছে – লাসায় অবস্থিত পোটালা প্রাসাদ যা তিব্বতের প্রতীক, সাংহাই এর দ্যা বান্ড যা আন্তর্জাতিক স্থাপত্য প্রতীক হিসেবে পরিচিত, ভিক্টোরিয়া হারবার, হেংজো এর ওয়েস্ট লেক যা চীনের ভূস্বর্গ নামে পরিচিত।