বাবার বুক ছিদ্র করে প্রিম্যাচুর শিশুকে কি বাবার ফুসফুসের সাথে সংযোগ করা হয়েছে?

[ad_1]

সম্প্রতি “নির্ধারিত সময়ের পূর্বে ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানের শ্বাসকষ্ট। ডাক্তার বললেন অক্সিজেন নয় সরাসরি ফুসফুসের কানেকশন লাগবে। কাউকে খুঁজে বের করুন। ছেলেটির বাবা বললেন খুঁজতে হবে না আমার বুক চিড়ে ব্যবস্থা করুন। সন্তানকে একমাস বুকের সাথে আগলে রেখে এখন উভয়ই সুস্থ।” শীর্ষক ছবি সম্বলিত একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানেএখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিতে প্রিম্যাচুর শিশুটিকে তারা বাবার বুক ছিদ্র করে ফুসফুসের সাথে যুক্ত করে শ্বাস দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বরং শিশুটিকে কেবল বুকে রেখে স্কিন টু স্কিন থেরাপি দেয়া হচ্ছিল, যা সাধারণত প্রিম্যাচ্যুর নবজাতকদের দেয়া হয়ে থাকে।

রিভার্স ইমেজ সার্চ করার মাধ্যমে jdazzle101 নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে মূল ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

jdazzle101 অ্যাকাউন্টটি মূলত জেনি সানচেজ নামের যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের। তার ইনস্টাগ্রামে অনুরুপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের আপলোড করা ছবি ও ভিডিও থেকে দেখা যায় যে, জেনির স্বামী রাসিন ডিকি তাদের শিশুকে স্কিন টু স্কিন থেরাপি দিচ্ছেন। জেনির ইনস্টাগ্রামে আপলোড করা স্কিন টু স্কিন থেরাপি দেয়ার কয়েকটি ছবি সংগ্রহ করে প্রচারের মাধ্যমেই মূলত প্রিম্যাচুর শিশুকে তারা বাবার বুক ছিদ্র করে ফুসফুসের সাথে যুক্ত করে শ্বাস দেয়া হচ্ছে শীর্ষক দাবিটি প্রচার করা হয়।

বাবা বুক ছিদ্র করে শিশুকে ফুসফুসের সাথে সরাসরি যুক্ত করার দাবি করা হলেও ছবি পর্যবেক্ষণে বুকে কোন ছিদ্র দেখা যায় নি এবং এ দাবিটি অবৈজ্ঞানিক। তবে ছবিতে একটি অক্সিজেন পাইপ দেখা গেলেও সেটা বাবার বুক ছিদ্র করে আসছে না।

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে ছবির সাথে বাবার বুক ছিদ্র করে শিশুকে ফুসফুসের সাথে যুক্ত করা হয়েছে শীর্ষক প্রচারিত গল্পের প্রেক্ষিতে জেনি সানচেজের করা একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে তিনি লিখেছেন,

“People have taken my photo and created their own stories about my family and son that have no truth”

অর্থাৎ, তার এই পোস্টে লোকেরা তাদের ছবি নিয়ে তার পরিবার এবং ছেলে সম্পর্কে তাদের নিজস্ব গল্প তৈরি করেছে, যার কোন সত্যতা নেই বলে জানিয়েছেন।

পরবর্তীতে অনুসন্ধানের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর বৃটিশ সংবাদমাধ্যম Mirror এ “Premature baby born at 5 months doctors warned had no chance of survival brushes mum’s hand away in amazing footage” শিরোনামে জেনি সানচেজের জন্ম নেয়া প্রিম্যাচিউরড শিশু নিয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,

“শিশুটির নাম ফন্টেইন ডিকি, শিশুটি গর্ভের ৫ম মাসে জন্ম গ্রহণ করেছিলো। অত্যাধিক কম ওজন নিয়ে গর্ভের ২৩ তম সপ্তাহে জন্ম নেয়া শিশুটির মা জেনি সানচেজ ও বাবা রাসিন ডিককে চিকিৎসকরা সতর্ক করেছিলেন যে তাদের ছেলের বেঁচে থাকার কোন সম্ভাবনা নেই এবং সে জন্মগ্রহণ করলে অন্ধ, বধির এবং চরম প্রতিবন্ধী হতে পারে।”

তবে শেষ পর্যন্ত তার বাবা মায়ের আপ্রাণ চেষ্টা, যত্ন এবং চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুটি জটিলতর অবস্থা থেকে বেঁচে যায় এবং সুস্থ হয়।

মূলত, অকালে বা প্রিম্যাচ্যুর হয়ে জন্ম নেয়া শিশুদের জন্য স্কিন টু স্কিন বা ক্যাঙ্গারু কেয়ার উপকারি হয়। জেনি সানচেজ এবং রাসিক ডিকি দম্পতির ৫ মাসে জন্ম নেওয়া প্রিম্যাচ্যুর শিশুকে তার বাবার বুকে রেখে সেই স্কিন টু স্কিন থেরাপি দেয়ার সময়ের তোলা কিছু ছবি শিশুটির মা তার ইনস্টাগ্রামে আপলোড করে। পরবর্তীতে সেই ছবিগুলো বিভ্রান্তিকর দাবিতে প্রচারিত হয়।

স্কিন টু স্কিন থেরাপি কি?

স্কিন টু স্কিন থেরাপি —যাকে ক্যাঙ্গারু থেরাপিও বলা হয, এট প্রিম্যাচুর এবং পূর্ণ-মেয়াদী শিশুদের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞরা প্রিটার্ম শিশুদের পিতামাতাকে স্কিন টু স্কিন কেয়ার অনুশীলন করার পরামর্শ ও সুপারিশ করেন। গবেষণায় দেখা গেছে যে স্কিন টু স্কিন থেরাপি প্রিম্যাচ্যুর শিশুদের জন্য স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী সুবিধার একটি পরিসীমা প্রদান করে। স্কিন টু স্কিন কেয়ার/থেরাপি সম্পর্কে জানতে দেখুন এখানেএখানে

সুতরাং, বাবার বুক ছিদ্র করে নবজাতক শিশুকে বাবার ফুসফুসের সাথে সরাসরি যুক্ত করার দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র



[ad_2]

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url