কাবার উপর দিয়ে বিমান উড়তে না পারার কারণ মধ্যাকর্ষন কেন্দ্র?

[ad_1]

সম্প্রতি, “আপনি কি জানেন কেন কাবার উপর দিয়ে উড়তে নিষেধ এবং মক্কায় কোন বিমানবন্দর নেই, তথ্য আপনাকে চমকে দেবে, এই তথ্যই অনেক মানুষকে ইসলামে নিয়ে এসেছে” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কাবা পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ কেন্দ্র হওয়ায় কাবাঘরের উপর দিয়ে পাখি বা বিমান উড়তে না পারার তথ্যটি সঠিক নয় বরং কাবার উপর দিয়ে বিমান না উড়ার বিষয়টি মূলত ধর্মীয় কারণে।

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট factcheck.afp তে ২০২১ সালের ২৮ জুলাই “Flying over the Kaaba in Mecca is not banned because of ‘magnetic attraction” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from factcheck.afp website

এই প্রতিবেদনটিতে ফ্রান্সের ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্স অব দ্য গ্লোব অব প্যারিসের ভূতাত্ত্বিক তরলগতিবিদ্যার জৈষ্ঠ্য গবেষক জুলিয়েন আউবার্টকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, পৃথিবীতে চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে, তবে সেটি মক্কায় নয়।

এ বিষয়ে জুলিয়েন আউবার্ট বলেন,পৃথিবীতে চৌম্বকীয় অসঙ্গতি বিদ্যমান সত্য। কিন্তু বিস্তৃত ম্যাপিং এবং পরিমাপ করেও বিজ্ঞানীরা মক্কায় সেটির অস্তিত্ব খুঁজে পাননি।

Screenshot from factcheck.afp website

এছাড়া তিনি বলেন, চৌম্বকীয় অসংগতি থাকলেও বিমানের পক্ষে এটির উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। কারণ এটি বিমানকে উড়তে বাধা দেয় না। এটি সর্বাধিক কম্পাস জ্যাম করতে পারে৷ অপরদিকে বর্তমান সময়ের বিমানগুলো  আধুনিক ভূ-অবস্থান ব্যবস্থা ব্যবহার করে থাকে।

অপরদিকে  Saudi Anti-Rumors Authority এর ইউটিউব চ্যানেল هيئة مكافحة الإشاعات No Rumors এ ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি “حقيقة منع الطيران فوق مكة المكرمة – هيئة مكافحة الإشاعات, (মক্কা আল-মুকাররামার উপর দিয়ে বিমান চালানোর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে সত্য)” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 


এই ভিডিও প্রতিবেদনটিতে একজন সৌদি পাইলট ও নেভিগেশন কর্মকর্তা ব্যাখ্যা করেন যে, মক্কার উপর দিয়ে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, মূলত পবিত্র স্থানকে সম্মান করা এবং সেখানে হজযাত্রীদের বিরক্ত না করার উদ্দেশ্যে।

পাশাপাশি সৌদি আরব ভিত্তিক গণমাধ্যম Lifeinsaudiarabia তে কাবার উপর দিয়ে বিমান না চলার পেছনে তিনটি কারণ খুঁজে পাওয়া যায়।

কারণগুলোর মধ্যে প্রথমে রয়েছে, মক্কায় কোনো বিমানবন্দর না থাকায় কাবার উপর দিয়ে কোনো বিমান চলাচল করে না। দ্বিতীয়ত, কাবার সম্মানে সৌদি আরব সরকার মক্কা শহরকে নো ফ্লাই জোন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তৃতীয়ত, অমুসলিমদের মক্কায় প্রবেশের অনুমতি না থাকা। কারণ, যদি বিমান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে অনেক অমুসলিম বিমানের  মাধ্যমে মক্কা নগরীতে প্রবেশ করতে পারে।

এছাড়া হজ সহ বিভিন্ন সময়ে হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের নিরাপত্তায় মক্কার উপর দিয়ে হেলিকপ্টার উড়ার ছবিও খুঁজে পাওয়া যায়।

লায়লাতুল কদর উপলক্ষে সৌদি আরব ভিত্তিক গণমাধ্যম ARAB NEWS এ ২০১৯ সালের ৩ জুন “Lailat al-Qadr (The Night of Power)” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে পাওয়া ছবিতেও মক্কার উপর দিয়ে হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যায়।

Screenshot from arabnews website

মক্কার উপর দিয়ে কি পাখি উড়তে পারে?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে কাবার উপর দিয়ে বিমানের পাশাপাশি পাখিও উড়তে পারে না দাবি করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে কাবার উপর দিয়ে পাখি উড়ে যেতে দেখা যায়।

Iamfeed নামের একটি টুইটার একাউন্টে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ প্রকাশিত এমন একটি টুইট বার্তা দেখুন এখানে

MNK Channel নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে কাবা ঘরের উপর দিয়ে পাখি উড়ার ভিডিও দেখুন এখানে। 


মূলত, কাবার উপর দিয়ে বিমান না চলার বিষয়টি পুরোটাই ধর্মীয় কারণে। সৌদি কর্তৃপক্ষ কাবা ঘরের সম্মান ও হাজীদের হজ পালনে যাতে কোনো অসুবিধা না হয় এজন্য কাবা তথা মক্কার উপর দিয়ে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টিকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাবা পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ কেন্দ্র হওয়ায় কাবাঘরের উপর দিয়ে পাখি বা বিমান উড়তে না পারার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। যার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্র হল কোনো বস্তুর একটি তাত্ত্বিক বিন্দু, যেখানে বস্তুর মোট ওজনকে কেন্দ্রীভূত বলে মনে করা হয়। কোনো বস্তুর মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্র সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি একটি চলমান বস্তু মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা কাজ করার সময় কেমন আচরণ প্রদর্শন করবে সেটি নির্ধারণ করে দেয়। বিশেষ করে ভবন এবং সেতুর মতো স্থাপত্য নির্মাণের ক্ষেত্রে এই মধ্যাকর্ষণ কেন্দ্রের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে কাবা মক্কার মসজিদে হারামের কেন্দ্রে  অবস্থিত এবং পৃথিবী হচ্ছে অনিয়মিতভাবে উপবৃত্তাকার। কাবা হচ্ছে পৃথিবীর এই পরিধির উপর অবস্থিত একটি বিন্দুমাত্র। সুতরাং কাবা পৃথিবীর কেন্দ্রে অবস্থিত এটা যুক্তিগতভাবে সঠিক নয়

সুতরাং, কাবা পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ কেন্দ্র হওয়ায় কাবাঘরের উপর দিয়ে পাখি বা বিমান উড়তে না পারার তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র



[ad_2]

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url