জাপানি সৈনিকের সাথে মৃত ভাইকে বহন করা শিশুর কথোপকথনের দাবিটি মিথ্যা
[ad_1]
সম্প্রতি “জাপানে যুদ্ধের সময় এই ছেলেটি তার মৃত ভাইকে কবর দিতে পিঠে নিয়ে যাচ্ছিল। একজন সৈন্য তাকে লক্ষ্য করে এবং তাকে এই মৃত শিশুটিকে ফেলে দিতে বলে যাতে সে ক্লান্ত না হয়। তিনি জবাব দিলেন: সে ভারী নয়, সে আমার ভাই!” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাপানি সৈনিকের সাথে মৃত ভাইকে বহন করা শিশুর কথোপকথনের তথ্যটি সঠিক নয় বরং শিশুটি তার মৃত ভাইকে নিয়ে একটি শ্মশানের সামনে দাঁড়িয়েছিল এবং সে সেখানে কারো সাথেই কথা বলেনি।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ছবির আর্কাইভ ওয়েবসাইট ‘Rare Historical Photo’ এর ওয়েবসাইটে “A Japanese boy standing at attention after having brought his dead younger brother to a cremation pyre, 1945” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, জো ও’ডোনেল নামে একজন চিত্রগ্রাহক ছবিটি জাপানের নাগাসাকি থেকে তুলেছিলেন। তাকে মার্কিন সেনাবাহিনী জাপানে পাঠিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতায় দেশটিতে যে ক্ষতি হয়েছিল তা নথিভুক্ত করার জন্য।
তিনি ১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে পরবর্তী সাত মাসে জাপান ভ্রমণ করেন এবং মৃত, আহত, গৃহহীন এবং এতিম সহ বোমা হামলায় শিকারদের দুর্দশার কথা প্রকাশ করেন। এই সময়েই তিনি মৃত ভাইকে নিয়ে একটি ছেলের শ্মশানের সামনে শেষকৃত্যের জন্য ঠাই দাঁড়িয়ে থাকার ছবিটি তুলেছিলেন।
প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, এই ছবিটি নিয়ে তিনি পরবর্তীতে একজন জাপানি সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দেন৷
সেখানে তিনি বলেন, “আমি দেখলাম, প্রায় দশ বছরের একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তার পিঠে একটি শিশু। সেসময়ে জাপানে আমরা দেখতাম, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা তাদের ভাই বা বোনদের পিঠে নিয়ে খেলতো। কিন্তু এই ছেলেটি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা৷ তার পায়ে কোনো জুতা ছিল না। মুখাবয়ব ছিল কঠোর। তার পিঠের বাচ্চাটির মাথা এমনভাবে ছিল যেন সে মাত্রই ঘুমিয়েছে। ছেলেটি সেখানে পাঁচ-দশ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিল।”
তিনি আরও যোগ করেন যে, “পরবর্তীতে সাদা মাস্ক পরা একজন ছেলেটির কাছে এসে তার পিঠ থেকে শিশুটিকে খুলে নিল। আমি তখন দেখলাম, শিশুটি মৃত। মাস্ক পরা লোকটি শিশুটিকে নিয়ে আগুনে ফেলে দিল। ছেলেটি কোনো নড়াচড়া ছাড়া সেখানে দাঁড়িয়ে আগুনের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে তার নিচের ঠোঁট এমনভাবে কামড়ে ধরেছিল যে সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। একসময় আগুন নিভে যায় এবং ছেলেটিও নীরবে সেখান থেকে চলে যায়।”
চিত্রগ্রাহকের এই সাক্ষাৎকার থেকে বুঝা যায় যে, ছবিটি তোলার সময় জাপানি ছেলেটি মূলত তার ভাইয়ের শেষকৃত্যের জন্য শ্মশানে অপেক্ষা করছিলো। এ সময়টিতে সে কারো সাথেই কথা বলেনি। শেষকৃত্য সম্পন্ন হলে সে নীরবে সে জায়গা থেকে প্রস্থান করে।
এই তথ্যটির আরও অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার থেকে জো ও’ডোনেলের ছেলে টিজে ও’ডোনেলের সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করা হয়। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, জাপানি সৈনিকের মৃত ভাইকে বহন করা শিশুর কথোপকথনের বিষয়টি মিথ্যা। এটার সাথে আমার বাবার ছবিটির কোনো সম্পর্ক নেই। মৃত ছেলেটিকে নিয়ে তার ভাই একটি শ্মশানের সামনে দাঁড়িয়েছিল, যেখানে মূলত পারমাণবিক বোমায় নিহতদের পোড়ানো হতো। এসময় তার সঙ্গে আমার বাবারও কোনো কথা হয়নি, ছেলেটিও কোনো কথা বলেনি।
মূলত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। ধারণা করা হয়, এই বোমা বিস্ফোরণে হিরোশিমা শহরের সাড়ে তিন লাখ মানুষের মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ এবং নাগাসাকিতে ৭৪ হাজার মানুষ কেবল বোমার বিস্ফোরণেই মারা যায়। এ ঘটনার পর মার্কিন সেনাবাহিনী পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতায় দেশটিতে যে ক্ষতি হয়েছিল তা নথিভুক্ত করার জন্য জো ও’ডোনেল নামে একজন চিত্রগ্রাহককে জাপানে পাঠায়। তিনি নাগাসাকি থেকে উক্ত ছবিটি তুলেছিলেন, যেখানে একটি জাপানি ছেলে তার ভাইয়ের শেষকৃত্যের জন্য শ্মশানে অপেক্ষা করছিলো। এ সময়টিতে সে কারো সাথেই কথা বলেনি। শেষকৃত্য সম্পন্ন হলে সে নীরবে সেখান থেকে প্রস্থান করে। কিন্তু এই ছবিটিকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জাপানি সৈনিকের সাথে মৃত ভাইকে বহন করা শিশুর কথোপকথনের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, জাপানি সৈনিকের সাথে মৃত ভাইকে বহন করা শিশুর কথোপকথনের তথ্যটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
[ad_2]