জর্জিয়ায় ফ্যাক্ট-চেকাররা ক্ষমতাসীন দলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে
[ad_1]
যদিও জর্জিয়ান গণতন্ত্র কখনও বিকাশ লাভ করেনি, দেশটির ফ্যাক্ট-চেকাররা বলছেন যে এখন জর্জিয়াতে উত্তেজনা বিশেষভাবে বেশি। তাদের মতে, প্রাক্তন পশ্চিমপন্থী রাষ্ট্রপতি মিখাইল সাকাশভিলি এবং একটি বিরোধী মতাদর্শের নিউজ চ্যানেল এমতাভারি টিভির পরিচালক সহ বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারের কারণে জনসাধারণ তাদের বক্তৃতার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হচ্ছে৷
অধিকন্তু, জর্জিয়ান শাসক দল ছদ্মনাম ব্যবহারকারী ফেসবুক অ্যাকাউন্টগুলির একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে এবং একটি তথাকথিত “ফ্যাক্ট-চেকিং” পেজ তৈরি করেছে; স্বাধীন মিডিয়া আউটলেট, সুশীল সমাজের সংস্থা এবং সম্প্রতি বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের আক্রমণ করতে।
সম্প্রতি, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ক্ষমতাসীন দলের (জর্জিয়ান ড্রিম) চেয়ারপারসন, ইরাকলি কোবাখিদজে ফ্যাক্টচেক জর্জিয়া আক্রমণ করেন এবং ভিত্তিহীনভাবে তাদের ফ্যাক্ট-চেকিং অপারেশনকে রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট এবং বিভ্রান্তি প্রচার করার পাশাপাশি আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার অভিযোগ করেন। ফ্যাক্ট-চেক জর্জিয়ার একজন মুখপাত্র ইমেইলের মাধ্যমে এই তথ্যগুলো আইএফসিএন সিগনেটরি প্রতিষ্ঠানগুলোর ফ্যাক্ট-চেকারদের সাথে শেয়ার করেছেন।
ইমেইলে আরও জানানো হয়, ফ্যাক্টচেক জর্জিয়া ২০১৩ সাল থেকে জর্জিয়াতে সফলভাবে কাজ করছে। এই পুরো সময় জুড়ে, তাদের বিশ্লেষকরা সত্য-ভিত্তিক রাজনৈতিক আলোচনায় অবদান রাখার জন্য তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। তারা জনস্বার্থের বিষয়ে সত্য তথ্য তুলে ধরেন এবং খারাপ তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তারা ২০১৭ সাল থেকে IFCN পরিবারের সদস্য। এটি-ই প্রথমবার নয় যে ফ্যাক্টচেক জর্জিয়া শাসক দলের ভিত্তিহীন আক্রমণের বিষয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সাংসদের কাছ থেকে কিছু আক্রমণ ছাড়াও, ফ্যাক্টচেক জর্জিয়া বহুবার শাসক দল, সরকার-সমর্থিত ফেসবুক পেজ ইন রিয়েলিটি’র অপমানজনক প্রচারণার বিষয়-ও ছিল।
এক ব্রিফিংয়ে, কোবাখিদজে বলেন: “যেসব এনজিওগুলি মিথ্যা তথ্যকে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করে, যেমন ফ্যাক্টচেক [জর্জিয়া], তারা প্রায়শই বিভ্রান্তি এবং মিথ্যা ছড়ায় এবং তাদের সরাসরি রাজনৈতিক স্বার্থ থাকে। আমরা যদি তাদের শিকড় অনুসরণ করি এবং [পরিদর্শন করি তাদের] প্রতিষ্ঠাতাদের সম্পর্কে তথ্য, আমরা খুব সহজেই এই জাতীয় এনজিওগুলির পিছনের নাম এবং উপাধিগুলি খুঁজে বের করতে পারব, যা সরাসরি উগ্র ও বিরোধীদের সাথে যুক্ত।”
কোবাখিদজে’র ব্রিফিংয়ের পরে, ফ্যাক্টচেক জর্জিয়া একটি পাবলিক বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে তারা পাঠক এবং সাধারণভাবে জনসাধারণের কাছে ভিত্তিহীন অভিযোগের প্রতিক্রিয়া প্রদান করেছে। ফ্যাক্টচেক জর্জিয়ার সম্পূর্ণ বিবৃতিটি খুঁজে পেতে পারেন এই লিংকে।
মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এবং জর্জিয়ান ফ্যাক্ট-চেকিং আউটলেট, মিথ ডিটেক্টর-এর প্রধান সম্পাদক তামার কিন্টসুরাশভিলি বলেন, “সরকার এমনকি ‘ইন রিয়ালিটি’ নামে তাদের নিজস্ব ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে যা আমাদের (সত্যিকার ফ্যাক্ট-চেকারদের) কাজকে অসম্মান করে। পাশাপাশি তাদের ইন-রিয়ালিটি নামক চেকিং সাইট যুক্তিহীন মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে। “তাই এখন আমরা জর্জিয়ায় গণতন্ত্রের বিকাশের ক্ষেত্রে অবনতি লক্ষ্য করছি।”
তথাকথিত চেকিং সাইট রিয়ালিটির পোস্টগুলোতে সুশীল সমাজের গ্রুপগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে। মিথ ডিটেক্টর, ফ্যাক্টচেক জর্জিয়া হলো ফ্যাক্ট-চেকিং আউটলেট এবং জর্জিয়ার রিফর্ম অ্যাসোসিয়েটস-এর সহযোগী সংস্থা যা মূলত পাবলিক পলিসি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক৷
সরকারের পরিচালিত তথাকথিত ফ্যাক্টচেকিং উদ্যোগটি এমন একটি কৌশল, যা ক্ষমতাসীন দলের একটি বৃহত্তর কূটনীতি প্রতিফলিত করে। ফ্যাক্ট-চেকাররা বলেছেন, সরকার বিরোধী যে কোনও কণ্ঠকে ঘৃণ্য গোষ্ঠী হিসাবে প্রচার করা হয় এই তথাকথিত চেকিং পেজ দ্বারা। এই পেজ পরিচালনাকারীরা এজাতীয় (সরকার বিরোধী কন্টেন্টের) কোনও তথ্যের সত্যতা যাচাই করেনা, পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে অস্বীকার করে এবং যাচাই ছাড়াই ফেক হিসাবে খারিজ করার মাধ্যমে তথ্য বা তথ্য-সম্পর্কিত ব্যক্তি, বিষয়কে অসম্মান করে।
যদিও তথাকথিত সেই চেকিং পেজটির ১০,০০০ অনুসারী রয়েছে এবং এর পোস্টগুলি প্রায়শই শাসক-দলের লোকজনদের দ্বারাই সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করা হয়। যা তাদের একটি বৃহৎ সংখ্যক এংগেজমেন্ট এনে দেয়।
“সুসংবাদটি হল আমরা এখনও সেই পর্যায়ে নেই যেখানে তারা আমাদেরও কারাগারে নিয়ে যাবে,” বলেছেন মরিয়ম সিটসিকাশভিলি, জর্জিয়ার রিফর্ম অ্যাসোসিয়েটস বা গ্রাসের একজন প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং ফ্যাক্টচেক জর্জিয়ার সম্পাদক৷ “এখনও এখানে নির্দিষ্ট পরিসরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রয়েছে কারণ বিরোধী মিডিয়া সংস্থার পরিচালক জেলে থাকা সত্ত্বেও, চ্যানেলটি সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক সম্প্রচার চালিয়ে যেতে পারছে।”
“যখন আমরা এটিকে ‘তথাকথিত ফ্যাক্ট-চেকিং’ বলি, এটি শুধুমাত্র এই কারণে নয় যে আমরা এগুলোকে পছন্দ করি না,” বলেছেন মালখাজ রেকভিশিলি, ফ্যাক্টচেক জর্জিয়ার প্রধান সম্পাদক৷ “তাদের কোনো সঠিক পদ্ধতি প্রকাশ করা নেই। কে পোস্টগুলি সম্পাদনা করছে বা লিখছে? কে পৃষ্ঠাটি পরিচালনা করছে সে সম্পর্কে কোনও সর্বজনীন তথ্য নেই। তারা যেহেতু প্রকাশ্যে রাজনৈতিকভাবে সরকারের সাথে সম্পৃক্ত, তাই তাদের উদ্যোগটি একটি সঠিক ফ্যাক্ট-চেকিং উদ্যোগ বলে আমরা মনে করি না, বলেছেন মালখাজ রেকভিশিলি।”
আরেকটি ফেসবুক পেজ টিভি সেজোনি; যেটি রাশিয়ার সাথে অধিভুক্ত, জর্জিয়ান সরকারের নয়। তারা একটি মিথ্যা ভিডিও প্রকাশ করেছে যাতে দেখাচ্ছে সুশীল সমাজের গ্রুপগুলোর নেতৃবৃন্দদের, বিরোধী পক্ষের অ্যাটর্নি এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
এর মধ্যে মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এবং জর্জিয়ান ফ্যাক্ট-চেকিং আউটলেট, মিথ ডিটেক্টর-এর প্রধান সম্পাদক তামার কিন্টসুরাশভিলি’র একটি নিম্নমানের ফটোশপ করা ছবি প্রচার করেছে। যদিও কিন্টসুরাশভিলি আদালতের কক্ষে তার হাতকড়া পরা ফেক ছবি নিয়ে হেসেছিলেন। ছবিগুলি দেশের কিছু রাজনৈতিক দলের ইচ্ছের প্রতিনিধিত্ব করে, অর্থ্যাৎ তারা চায় সেদেশের সত্যিকারের ফ্যাক্ট-চেকাররা যেন এভাবেই গ্রেফতার হয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
প্রতিবেদনটির একটি বৃহৎ অংশ পয়েন্টারে প্রকাশিত গত ৪ আগষ্টের একটি প্রতিবেদনের বাংলা ভাবানুবাদ। সম্প্রতি ১৩ সেপ্টেম্বর, ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারপারসন (জর্জিয়ান ড্রিম), ইরাকলি কোবাখিদজে ফ্যাক্টচেক জর্জিয়া আক্রমণ করে এবং ভিত্তিহীনভাবে তাদের ফ্যাক্ট-চেকিং অপারেশনকে রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট এবং বিভ্রান্তি প্রচার করার পাশাপাশি আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার অভিযোগ করেন। সে কারণেই এই আর্টিকেলটি দেশীয় পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার এই প্রচেষ্টা।
[ad_2]