ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্র HSC: তৃতীয় অধ্যায় সকল অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
[ad_1]
ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্র HSC তৃতীয় অধ্যায় সকল অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়ার হয়েছে। তৃতীয় অধ্যায় নাম হচ্ছে খুলাফায়ে রাশেদিন।
প্রশ্ন-১. খুলাফায়ে রাশেদিন বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো। [ঢা বো., দি. বো., কু. বো., চ. বো., সি. বো. ১৯. ঢা বো., দি. বো, সি. বো. য. বো. ১৮)
উত্তর: খুলাফায়ে রাশেদিন বলতে ইসলামের প্রথম চারজন খলিফাকে বোঝায় । খুলাফায়ে রাশেদিন অর্থ সত্য বা ন্যায় পথগামী খলিফাগণ । হযরত মুহাম্মদ (স) ইন্তেকালের পর (৬৩২ খ্রি.) যে চারজন সাহাবি মহানবি (স)-এর প্রতিনিধিরূপে আরব রাষ্ট্র ও মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন, তারা-ই মুসলিম জাহানের ইতিহাসে খুলাফায়ে রাশেদিন নামে পরিচিত। তারা হলেন হযরত আবু বকর (রা), হযরত ওমর (রা), হযরত ওসমান (রা) এবং হযরত আলী (রা)। তারা ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম রাষ্ট্রের সর্বাধিক মঙ্গলের জন্য আল্লাহ ও রাসুল (স)-এর নির্দেশিত পদ্ধতিতে সব কাজ পরিচালনা করায় তাদেরকে খুলাফায়ে রাশেদিন বলা হয় ।
প্রশ্ন-২. খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা হয় কেন?
উত্তর: মহানবি (স)-এর ওফাতের (মৃত্যু) পর ইসলাম ও ইমলামি রাষ্ট্রের সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ এবং পৃথিবীতে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা হয়।মুসলিম উম্মাহর ইহলৌকিক কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির লক্ষ্যে ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকসহ সকল অঙ্গনের সার্বিক কর্মসূচিতে নেতৃত্ব প্রদান করে কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনাই খিলাফতের উদ্দেশ্য। তবে এ খিলাফত অবশ্যই জনসাধারণ কর্তৃক স্বীকৃত ও সমর্থিত হতে হবে।
প্রশ্ন-৩. হযরত ওমর (রা) হযরত আবু বকর (রা) কে প্রথম খলিফা হিসেবে নির্বাচিত করতে চাইলেন কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বয়স, পদমর্যাদা ও ইসলাম ধর্ম প্রচারে অবদানের কথা বিবেচনা করে হযরত ওমর (রা) হযরত আৰু বকর (রা)কে খলিফা হিসেবে নির্বাচিত করতে চাইলেন। রাসুল (স)-এর মৃত্যুর পর হযরত ওমর (রা) ইসলামের প্রথম খলিফা হিসেবে হযরত আবু বকর (রা) কে নির্বাচনের ব্যাপারে জোরালো বক্তব্য দেন। আবু বকর (রা) এর ইমামতিতে মহানবি (স)-এর কয়েকবার নামাজ আদায় করা, বয়োজ্যেষ্ঠতা, নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ, তাঁর প্রতি মহানবি (স)-এর আস্থা প্রভৃতি বিবেচনা করে ওমর (রা) আবু বকর (রা) কে প্রথম খলিফা হিসেবে নির্বাচিত করার পক্ষে মত দেন।
প্রশ্ন-৪. হযরত আবু বকর (রা) কে রাসুল (স) সিদ্দিক উপাধিতে ভূষিত করেন কেন? (সকল বোর্ড ২০১৬/
উত্তর: রাসুল (স)-এর মিরাজের (ঊর্ধ্বগমন আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের জন্য) কথা শোনামাত্র বিশ্বাস স্থাপন করার কারণে রাসুল (স) হযরত আবু বকর (রা) কে সিদ্দিক উপাধিতে ভূষিত করেন। হযরত আবু বকর (রা) রাসুল (স)-এর জীবনসহচর ও ইসলামের একনিষ্ঠ সেবক ছিলেন। নেতৃস্থানীয় ও বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি রাসুল (স)-এর মিরাজ গমনের কথা শোনামাত্র নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করেন। এ জন্যই রাসুল (স) তাকে ‘সিদ্দিক’ বা বিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত করেন।
প্রশ্ন-৫. রিদ্দার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল কেন?
উত্তর: ভণ্ডনবি ও স্বধর্মত্যাগীদের দমনের জন্য রিদ্দার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। রিদ্দার যুদ্ধ বলতে হযরত আবু বকর। (রা)-এর সময়ে স্বধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধকে বোঝায়। রাসুল (স)-এর ওফাতের পর বিভিন্ন গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ইসলাম ত্যাগ এবং খলিফার আধিপত্যকে অস্বীকার করে ইসলামের বিরুদ্ধে একটি সুসংঘবদ্ধ আন্দোলন পরিচালিত করে। অনেকে নিজেদের নবি দাবি করে। এসব ভণ্ড নবির বিরুদ্ধে হযরত আবু বকর (রা) মুসলিম বাহিনী নিয়ে যে অভিযান পরিচালনা করেন তাই রিদ্দার যুদ্ধ নামে পরিচিত।
প্রশ্ন-৬. স্বধর্মত্যাগী আন্দোলন বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: স্বধর্মত্যাগী আন্দোলন বলতে ভণ্ডনবিদের বিরুদ্ধে হযরত আবু বকর (রা)-এর পরিচালিত যুদ্ধকে বোঝায়। মহানবি (স)-এর পরলোকগমনের পর গোত্রের পর গোত্র ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে তাদের আগের ধর্মে ফিরে যেতে থাকে। এছাড়া এসময় কিছু সংখ্যক গোত্রপ্রধান নবুয়তকে একটি লাভজনক পেশা মনে করে নিজেদেরকে নবি ঘোষণা করে। এদের মিথ্যা বক্তব্যে সমাজে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ও ইসলাম ধর্মের নেতৃত্ব নিয়ে চরম সংকট তৈরি হয়। এ চরম সংকটময় মুহূর্তে হযরত আবু বকর (রা) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করে এসব ভণ্ডনবি ও স্বধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন । এ যুদ্ধই ইসলামের ইতিহাসে রিদ্দার যুদ্ধ বলে খ্যাত।
প্রশ্ন-৭. খালিদ বিন ওয়ালিদ ইতিহাসে বিখ্যাত কেন? ব্যাখ্যাসহ লেখো। ঢোকা বোর্ড ২০১৭
উত্তর: দক্ষ ও সুকৌশলী বীর সেনাপতি হিসেবে খালিদ বিন ওয়ালিদ ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন। । প্রাথমিক জীবনে কুরাইশদের সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধ করলেও হুদায়বিয়ার সন্ধির (৬২৮ খ্রি.) পর খালিদ বিন ওয়ালিদ। ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর রাসুল (স)-এর সময়ে হুনায়ুনের যুদ্ধ, তায়েফ বিজয়, তাবুক অভিযানে দক্ষতার সাথে যুদ্ধ করে তিনি ইসলামের বিজয় তরান্বিত করেন। তাছাড়া রাসুল (স)-এর মৃত্যুর পর ইয়ামামার যুদ্ধে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে তিনি ভণ্ড নবিদের শায়েস্তা করেন। এছাড়া জীবিত থাকা পর্যন্ত তিনি ইসলামের সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। ইসলামের খেদমতে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্যই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন ।
প্রশ্ন-৮. ভণ্ডনবি কারা? ব্যাখ্যা করো। ২০১৯
উত্তর: মহানবি (স)-এর জীবনের শেষ দিকে আসওয়াদ আনাসি এবং আবু বকর (রা) এর ক্ষমতা গ্রহণের পর মুসায়লামা, তোলায়হা এবং সাজাহ নবুয়ত পাওয়ার দাবি করে খিলাফতের সর্বত্র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এরাই ভণ্ডনবি নামে পরিচিত মহানবি (স)-এর ইন্তেকালে হেজাজ ছাড়া প্রায় পুরো আরবে ইসলাম ধর্ম ও নবপ্রতিষ্ঠিত মদিনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিদ্রোহ শুরু হয়। অনেকে ইসলাম ত্যাগ করে আগের ধর্মে ফিরে যায়। নবুয়তকে লাভজনক মনে করে কিছু ব্যক্তি নিজেদের নবি বলে দাবি করে। অনেক বেদুইন গোত্র জাকাত দানে অস্বীকার করে। এভাবে প্রায় গোটা আরবে খণ্ড বিদ্রোহ দেখা দেয় । রাসুল (স)-এর মৃত্যুর পর আরবের এসব বিদ্রোহী গোত্র এবং ভণ্ডনবিদের পরিচালিত আন্দোলনকে ইসলামের ইতিহাসে স্বধর্মত্যাগী আন্দোলন (Apostasy Movement) বলা হয়। আর তাদের বিরুদ্ধে খলিফা হযরত আবু বকর (রা) যে অভিযান পরিচালনা করেন তা রিদ্দার যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
প্রশ্ন-৯. হযরত আবু বকর (রা) কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আবু বকর (রা) ইসলাম ধর্মকে ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা করে ত্রাণকর্তা হিসেবে পরিচিতি পান।
ইসলামের এক সংকটময় মুহূর্তে হযরত আবু বকর (রা) খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি মাত্র দুই বছর তিন। মাস খলিফা পদে অধিষ্ঠিত থেকে ইসলাম ধর্ম ও শিশু মুসলিম রাষ্ট্রকে এক ভয়াবহ বিপদ হতে রক্ষা করেন। তার সময় ভণ্ডনবিদের ধর্মীয় প্রতারণা, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন তিনি কঠোর হস্তে দমন করে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখেন। তিনি খিলাফত লাভের পূর্বে ও পরে ইসলামের সেবায় জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন। এজন্য তাকে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন-১০. হযরত ওমর (রা) কে ফারুক উপাধি দেওয়া হয়েছিল কেন?
উত্তর: সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়ের বিচক্ষণতা থাকায় ওমর (রা)কে ফারুক উপাধি দেওয়া হয়েছিল । ইসলাম গ্রহণের পূর্বে হযরত ওমর (রা) ইসলামের ঘোর শত্রু ছিলেন। প্রচণ্ড ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে তিনি ৬১৬ খ্রিষ্টাব্দে মহানবি (স) কে হত্যার দায়িত্ব নিয়ে খোলা তরবারি হাতে তার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে জানতে পারেন যে, তার বোন। ফাতিমা ও ভগ্নিপতি সাঈদ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। এ সংবাদ শুনে তিনি তাদের শাস্তি প্রদান করতে বোনের বাড়িতে যান। কিন্তু বোনের কণ্ঠে সূরা ত্বহার তেলাওয়াত শুনে ইসলামের মর্মবাণী বুঝতে পেরে ৩৩ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ইসলাম ও পৌত্তলিকতার মধ্যকার পার্থক্য বুঝতে পারায় মহানবি (স) তাঁকে ‘ফারুক’ বা ‘সত্য-মিথ্যার প্রভেদকারী’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
প্রশ্ন-১১, হযরত ওমর (রা)-এর দিউয়ান বা রাজস্বব্যবস্থা ব্যাখ্যা করো। রা. বো, দি, বো, কু. বো.. চ. বো, য, বো, সি. বো.. বা. বো. ১৭
উত্তর: হযরত ওমর (রা)-এর কেন্দ্রীয় প্রশাসনের একটি অন্যতম দফতর ছিল দিউয়ান বা রাজস্ব বিভাগ । রাসুল (স) এবং আবু বকর (রা) এর সময়ে রাষ্ট্রীয় রাজস্বের কিছু উৎস ছিল, যা হযরত ওমর (রা) তার শাসনামলেও বজায় রাখেন। এগুলো হলো- আল গনিমত, আল যাকাত, আল উশর, আল জিজিয়া, আল খারাজ, আল উশুর, আল ফাই প্রভৃতি। এসব উৎস থেকে আয়কৃত অর্থ বায়তুল মালের মাধ্যমে জনকল্যাণে ব্যয় করা হয়। আর রাষ্ট্রের আয় ও ব্যয়ের হিসেব সংরক্ষণের জন্য ওমর (রা) যে দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন তা দিওয়ান নামে পরিচিত।
প্রশ্ন-১২. মজলিস-উস-শুরা বলতে কী বোঝায়? রোবো, য, বো, ব, বো. ১৯/
উত্তর: মজলিস-উস-শুরা ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার একটি মন্ত্রণাপরিষদ। প্রাক-ইসলামি যুগের দারুল নাদওয়ায় বয়োজ্যেষ্ঠ পরিষদের অনুকরণে রাসুল (স) একটি পরামর্শব্যবস্থা চালু রাখেন । পরবর্তী সময়ে হযরত আবু বকর (রা)ও সেটি অনুসরণ করেন। হযরত ওমর (রা) এ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কারণ তিনি সব সময় বলতেন, পরামর্শ ছাড়া খিলাফত চলতে পারে না। এ গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি জনগণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ এবং স্বচ্ছভাবে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রণাপরিষদ গঠন করেন, যা মজলিশ-উস-শুরা নামে পরিচিত। এটি মজলিস-উস-আম ও মজলিস-উস-খাস-এ দুভাগে বিভক্ত ছিল।
প্রশ্ন-১৩. জিজিয়া কী? ব্যাখ্যা করো। /সকল বোর্ড ২০১৫/
উত্তর: জিজিয়া হচ্ছে ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিমদের দেওয়া নিরাপত্তা কর। জিজিয়া মাথাপিছু হারে নির্ধারিত হয়ে থাকে। অমুসলিম নাগরিকরা জিজিয়া দেওয়ার মাধ্যমে যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে অব্যাহতি লাভ করে । জিজিয়া দেওয়ার বদৌলতে মুসলিম শাসকেরা অমুসলিম নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়। তবে নারী, শিশু, বয়োবৃদ্ধ ও উন্মাদ এবং ধর্মীয় পুরোহিতরা এ করের আওতাভুক্ত নয় ।
প্রশ্ন-১৪, বায়তুল মাল বলতে কী বোঝায় ?
রা. বো., য. বো, ব. বো. ১৯/
উত্তর: বায়তুল মাল বলতে ইসলামি রাষ্ট্রের সরকারি কোষাগারকে বোঝায়। ইসলামি রাষ্ট্রে রাষ্ট্রের সমস্ত অর্থ এক স্থানে জমা থাকে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিচালনায় এ অর্থ ব্যয় করা হয়। রাষ্ট্রের বাৎসরিক ব্যয় ভার নির্বাহের পর উদ্বৃত্ত অর্থ গরিবদের মাঝে বণ্টন করা হয়। রাষ্ট্রের সমগ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এ সম্পদের ওপর নির্ভর করে। এ ধরনের রাষ্ট্রীয় কোষাগারই বায়তুল মাল নামে পরিচিত।
প্রশ্ন-১৫, গনিমত বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: গনিমত বলতে যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের কাছ থেকে প্রাপ্ত মালকে বোঝায়। কোনো যুদ্ধে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হলে বিজিত পক্ষ পরাজিত পক্ষের ধন-সম্পদের ওপর কর্তৃত্ব লাভ করে। যুদ্ধজয়ের ফলে তারা এ সকল ধন-সম্পদ নিজেদের করে নিতে পারে। এগুলোই গনিমত হিসেবে পরিচিত। বিজিত সৈন্যদের অস্ত্রশস্ত্র, ঘোড়া, খাদ্যশস্য, পোশাক, স্বর্ণ-রোপ্য প্রভৃতি গনিমতের অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন-১৬, হযরত ওমর (রা) আরব জাতীয়তাবাদনীতি গ্রহণ করেছিলেন কেন?
উত্তর: আরব জাতির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, বিশুদ্ধতা, আভিজাত্য ও সামরিক প্রাধান্য বজায় রাখার জন্য হযরত ওমর (রা) আরব জাতীয়তাবাদ নীতি গ্রহণ করেন। জাতীয়তাবাদ একটি রাজনৈতিক অভিব্যক্তি। আরব জাতি বা মুসলিমরা যে বিশ্বে একটি স্বতন্ত্র সত্তা তা প্রমাণ এবং উন্নত করাই ছিল হযরত ওমর (রা) এর আরব জাতীয়তাবাদ নীতির মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে তিনি অর্থনৈতিক, সামরিক, প্রশাসনিক সব ক্ষেত্রে আমূল সংস্কার সাধান করে মুসলিম উম্মাহকে একটি আদর্শ ও শ্রেষ্ঠ জাতিতে রূপ দেওয়ায় চেষ্টা করেন। তিনি আরবদের প্রাধান্য বজায় রাখতে খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের আরব দেশের বাইরে অবস্থানের নির্দেশ দেন। আরবি ভাষা সংস্কারে বিশেষ উদ্যোগ নেন। তাছাড়া আরবদের বিজিত দেশে জমি ক্রয় বা উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এভাবে তিনি আরব জাতীয়তাবাদ নীতি গ্রহণ করে আরবদের নিজস্ব সত্তাও সংস্কৃতি সংরক্ষণ করেন।
প্রশ্ন-১৭. কীভাবে হযরত ওসমান (রা) খিলাফত লাভ করেন? (ঢাকা বোর্ড ২০১৭ |
উত্তর: নির্বাচকমণ্ডলীর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হযরত ওসমান (রা) খিলাফত লাভ করেন । খলিফা নির্বাচনের জটিলতা এড়াতে হযরত ওমর (রা) মৃত্যুর আগে একটি নির্বাচনি পরিষদ গঠন করেন, যার সদস ছিলেন হযরত ওসমান (রা), হযরত আলী (রা), তালহা, যুবাইর, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস ও আবদুর রহমান। হযরত ওমরের (রা) মৃত্যুর সময় তালহা মদিনায় উপস্থিত ছিলেন না এবং আব্দুর রহমান (রা) খিলাফতের গুরুভার নিতে সম ছিলেন না। এ সময় আব্দুর রহমান ও জুবাইর, ওসমান ও আলী উভয়কেই খলিফা হিসেবে সমর্থন করেন। আবার স ওসমানকে, ওসমান আলীকে এবং আলী ওসমানকে সমর্থন করেন। ফলে এক ভোট বেশি পেয়ে হযরত ওসমান ( ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম বিশ্বের তৃতীয় খলিফা নির্বাচিত হন।
প্রশ্ন-১৮. জুন্নুরাইন বলতে কী বোঝায়? / টা বো.. দি বো, কু. বো, চবো, সি. বো. ১৯ অথবা, হযরত ওসমান (রা) কে জুন্নুরাইন বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো। / রা. বো, কু.বো,, চ, বো,, ব. বো. ১৮/
উত্তর: হযরত ওসমান (রা) মহানবি (স) এর দুই কন্যা, রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুমকে বিয়ে করেছিলেন বলে তারে জুন্নুরাইন বলা হয়।
জুন্নুরাইন শব্দের অর্থ দুই জ্যোতিষ্কের অধিকারী। হযরত মুহাম্মদ (স) এর কন্যারা ছিলেন জ্যোতিষ্কের সাথে তুলনীয়। বিবাহ সূত্রে ওসমান (রা) তাদের দুজনের অধিকার লাভ করেন। এজন্য তাকে দুই জ্যোতিষ্কের অধিকারী বা জুন্নুরাইন বলা হয়।
প্রশ্ন-১৯. হযরত ওসমান (রা) কীভাবে পানীয় জলের অভাব দূর করেন? ব্যাখ্যা করো। [ঢা বো., দি বো, সি. বো,, য. বো. ১৮
উত্তর: মদিনার বিখ্যাত রুমা কৃপটি ক্রয় করে হযরত ওসমান (রা) মদিনাবাসীর পানীয় জলের অভাব দূর করেন। মহানবি (স)-এর নেতৃত্বে মুসলমানরা ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে। মদিনায় পানীয় জলের অভাব ছিল। প্রকট। পানীয় জলের অভাব দূর করার জন্য মহানবি (স)-এর নির্দেশে ইসলামের তৃতীয় খলিফা সম্পদশালী হযরত ওসমান (রা) কূপ কেনার জন্য অর্থ প্রদান করেন। ওসমান (রা)-এর দেওয়া ১৮,০০০ দিরহামের মাধ্যমে মদিনাবাসীর পানির সংকট দূর করার জন্য ‘বীর মা ক্রয় করা হয়। পরে আরও ২০০০ দিরহাম দিয়ে তিনি এ কূপটি সংস্কার করেন।
প্রশ্ন-২০. হযরত ওসমান (রা) কে জামিউল কুরআন বা কুরআন সংকলনকারী বলা হয় কেন?
উত্তর: বিশেষ কমিটি গঠন করে বিশেষ সতর্কতার সাথে কুরআন সংকলনের জন্য ওসমান (রা)কে জামিউল কুরআন বলা হয়। আল কুরআন সংকলন খলিফা ওসমান (রা)-এর একটি অক্ষয় কীর্তি। ওসমান (রা)-এর খিলাফতকালে তাঁর সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে কুরআন পাঠের উচ্চারণভঙ্গির পার্থক্য দেখা দেয়। এ পার্থক্য দূর করার জন্য ৬৫১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জায়েদ বিন সাবিতের নেতৃত্বে এক কমিটি গঠন করেন। এ কমিটি খলিফা ওমরের (রা) কন্যা বিবি হাফসার কাছে সংরক্ষিত কুরআনের মূল পাণ্ডুলিপি থেকে একটি বিশুদ্ধ কুরআন সংকলন করেন। মূল কপির সাতটি অনুলিপি তৈরি করে ওসমান (রা) সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেন এবং অন্য কপিগুলো পুড়িয়ে ফেলেন। তাঁর এই কীর্তির জন্য ইসলাম বিরাট ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়।
প্রশ্ন-২১, হযরত ওসমান (রা) কে গণি বলা হয় কেন?
উত্তর: হযরত ওসমান (রা) তৎকালীন আরবের শ্রেষ্ঠ সম্পদশালীদের একজন ছিলেন। তাই তাঁকে গণি (ধনী) বলা হয়। হযরত ওসমান (রা) ছিলেন একজন বড় ব্যবসায়ী। তাঁর অঢেল সম্পদ তিনি ইসলাম ও মুসলমানদের কল্যাণে ব্যয় করেন। জাহেলিয়া যুগেও তিনি পরোপকার ও বদ্যান্যতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। মুসলমানদের পানির কষ্ট দূর করতে তিনি ২০,০০০ দিরহাম ব্যয় করে মদিনার বিখ্যাত ‘বীররুমা’ কিনে দেন এবং সংস্কার করেন। তাছাড়া তিনি তাবুক যুদ্ধে ১০ হাজার সৈন্যের ব্যয় ভার বহন করে তিনি প্রায় দুই হাজার ক্রীতদাসকে দাসত্ব মুক্ত করেন । সুতরাং বোঝা যায়। হযরত ওসমান (রা) একজন ধনী ব্যক্তি ছিলেন এবং এজন্যই তাকে গণি বলা হতো।
প্রশ্ন-২২. হযরত আলী (রা) কে জ্ঞানের দরজা বলা হয় কেন?
উত্তর: অসাধারণ মেধা ও প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী হওয়ায় হযরত আলী (রা) কে রাসুল (স) জ্ঞানের দরজা বলেছেন। হযরত আলী (রা) কুরআন, হাদিস, সাহিত্য, ব্যাকরণ, নীতিশাস্ত্র, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী। তার রচিত ‘দিওয়ানে আলী’ গ্রন্থটি আরবি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। হযরত আলী (রা) এর তত্ত্বাবধানে আবুল আসওয়াদ প্রথম আরবি ব্যাকরণ রচনা করেন। তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্যের কারণে মহানবি (স) তাকে জ্ঞানের দরজা বলে সম্বোধন করেছেন।
প্রশ্ন-২৩. দুমার মীমাংসা কী? ব্যাখ্যা করো। (সকল বোর্ড ২০১৬/
উত্তর: হযরত আলী (রা) ও মুয়াবিয়ার মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনে যে সালিশি হয়েছিল, সেটিই ইতিহাসে দুমার মীমাংসা নামে পরিচিত । হযরত আলী (রা) ও মুয়াবিয়ার মধ্যে সিফফিন নামক স্থানে যে সংঘর্ষটি হয় তা মীমাংসার জন্য উভয়পক্ষ থেকে একজন করে প্রতিনিধি নিযুক্ত করা হয়। হযরত আলীর পক্ষে আবু মুসা আশারি ও মুয়াবিয়ার পক্ষে আমর বিন আস সালিশদার বা মধ্যস্থতাকারী নিযুক্ত হন। তারা ৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী দুমাতুল জন্দলে একটি সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন। ইতিহাসে এটিই দুমার মীমাংসা নামে পরিচিত। তবে মুয়াবিয়া মনোনীত আমরের কূটকৌশলের কারণে দুমার মীমাংসা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
প্রশ্ন-২৪. উষ্ট্রের যুদ্ধ কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দে হযরত আয়েশা (রা), তালহা, যুবায়ের এবং হযরত আলী (রা) এর মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধই উষ্ট্রের যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। উসমান (রা) এর হত্যাকাণ্ডের বিচার বিলম্বিত হওয়ার প্রেক্ষিতে তালহা, যুবায়ের এবং আয়েশা (র) বসরা দখল করে। হযরত আলী (রা) তাদের বিদ্রোহ দমনের জন্য সেখানে যান এবং যুদ্ধের বদলে শান্তিচুক্তি করার প্রস্তাব দেন। শান্তি আলোচনার প্রস্তাবের অগ্রগতিতে মুনাফিক ইবনে সাবা আতঙ্কিত হয়ে আলী (রা)-এর অগোচরে হযরত আয়েশার (রা) নিদ্রিত বাহিনীকে আক্রমণ করে। এমতাবস্থায় হযরত আলী বহু কষ্টে যুদ্ধ বন্ধ করতে সক্ষম হন। বিবি আয়েশাকে (রা) উদ্ধার করে তিনি মদিনায় পাঠিয়ে দেন। বিবি আয়েশা (রা) উটের পিঠে চড়ে এ যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন বলে
ইতিহাসে এটি উষ্ট্রের যুদ্ধ নামে পরিচিত।
প্রশ্ন ২৭: শিয়া কারা? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ইসলামের ইতিহাসে ‘শিয়া’ বলতে মহানবি (স)-এর জামাতা আলী (রা)-এর সমর্থকদের সমন্বয়ে গঠিত দলকেই বোঝায়।“শিয়া’ হচ্ছে সেই গোষ্ঠী যারা একমাত্র মহানবি (স)-এর গোত্রভুক্ত। বিশেষ করে মুহাম্মদ (স)-এর কন্যা ফাতিমা এবং তাঁর স্বামী আলীর অনুসারী। ইসলামে ‘খিলাফত’ ও ‘ইমামত’ প্রশ্নে যে দুটি দলের সৃষ্টি হয়েছিল তাদের মধ্যে যারা হযরত আলী (রা)-কে সমর্থন করে রাজনৈতিকভাবে সংঘটিত হয়েছিল তারাই “শিয়া’
প্রশ্ন-২৬. খারেজি সম্প্রদায়ের উৎপত্তির কারণ কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: দুমাতুল জন্দলের মীমাংসাকে কেন্দ্র করে ইসলামের ইতিহাসে খারেজি সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ঘটে।
খারেজি সম্প্রদায় বলতে দুমাতুল জন্দলের প্রতারণাপূর্ণ রায় অমান্যকারী ১২০০ দলত্যাগকারীদের নির্দেশ করে। তারা অধিকার নেই। অনেক ঐতিহাসিকের মতে উমাইয়াদের বিলাসিতা ও আর্থিক লালসার বিরোধিতাই ছিল খারেজি মানুষের বিচার মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে স্লোগান তুলে যে, ‘লা হুকমাহ ইল্লাল্লাহি’ তথা আল্লাহ ছাড়া কারো মীমাংসার সম্প্রদায় সৃষ্টির কারণ।
source: অক্ষর পত্র প্রকাশনী বই
এই কন্টেন্ট এর সারবস্তু গৃহীত হয়েছে © ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
[ad_2]