ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্র HSC , প্রথম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

[ad_1]

 

প্রথম অধ্যায় : পৌরনীতি ও সুশাসন খ নাম্বার প্রশ্ন ও উত্তর 

প্রশ্ন-১. পৌরনীতি বলতে কী বোঝ

উত্তর: পৌরনীতি হলো নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। পৌরনীতি হচ্ছে নাগরিকতা বিষয়ক অধ্যয়ন শাস্ত্র এবং এটি সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা। পৌরনীতি নাগরিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত স্থান আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে থাকে। পৌরনীতি মানুষের কার্যাবলি, অভ্যাস ও আচরণ বিশ্লেষণ এবং রাষ্ট্র ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি পর্যালোচনার আলোকে আদর্শ নাগরিক জীবনের শিক্ষা দান করে।

প্রশ্ন-২. পৌরনীতি শব্দের উদ্ভব বা উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে? বর্ণনা করো।

উত্তর: শব্দগত অর্থে পৌরনীতি হলো নগররাষ্ট্রে বসবাসরত নাগরিকদের আচরণ ও কার্যাবলি সংক্রান্ত বিজ্ঞান। পৌরনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Civics Civics শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে দুটি ল্যাটিন শব্দ Civis ও Civitas থেকে Cinis অর্থ নাগরিক, আর Civitas অর্থ নগররাষ্ট্র। সুতরাং উৎপত্তিগত অর্থে নগর ও নগরবাসী সম্পর্কিত রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে জ্ঞানের যে শাখা গড়ে উঠেছে তাই পৌরনীতি ।

প্রশ্ন-৩, পৌরনীতিকে নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান বলা হয় কেন? দিবো. ১. বো. ১-দিবো, যা ব বো. ১৬ দিবো, রা. বা., 201 

উত্তর: নাগরিক ও নাগরিক জীবনের সাথে জড়িত সকল বিষয় আলোচনা করে বলে পৌরনীতিকে নাগরিকতা বিষয়ক নাগরিক জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়াকলাপ নিয়ে পৌরনীতি অনুশীলন চালায়। নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের সাথে জড়িত ঘটনাবলি ও কার্যকলাপ এ শাস্ত্রে আলোচিত হয়। নাগরিক জীবনের ধর্মীয়, নৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা সার্বিক নিকের আলোচনা পৌরনীতির বিষয়বস্তু।

প্রশ্ন-৪. জবাবদিহিতা বলতে কী বোঝায়? বো. ১৪: ডা. বো. ১৬ দি বো. ১৫/

উত্তর: নিজের কাজের জন্য অন্য ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যাদানের বাধ্যবাধকতাই জবাবদিহিতা । জবাবদিহিতা সুশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ব্যক্তি যখন তার কাজটি কী উদ্দেশ্যে বা কীভাবে করা হয়েছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয় তখন তাকে জবাবদিহি করা বলে। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং আর্থিক সংগঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা জনগণ এবং সংগঠনের সংশ্লিষ্টদের কাছে তাদের কাজের জন্য কমবেশি দায়বদ্ধ। সর্বস্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে দুর্নীতি কমবে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস পাবে, সর্বোপরি জনকল্যাণ নিশ্চিত হবে।

প্রশ্ন-৫. স্বচ্ছতা বলতে কী বোঝায়? বলো ১২/ 

উত্তর: সব ধরনের অনৈতিকতা পরিহার করে নিয়মনীতি মেনে কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করাকে স্বচ্ছতার অর্থ হলো স্পষ্টতা কোনো কাজ কতটুকু ন্যায়সার বা বৈ ा এর মাধ্যমে মানুষ বুঝতে পারে। ত সুশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। একে সুশাসনের পূর্বশর্তও বলা হয়। একটি দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রম, বা সিদ্ধান্তভাষণ প্রক্রিয়া স্পষ্টতার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হলে তা সহজেই জনগণের কাছে বোধগম্য ও গ্রহণযোগ্য হয়। এতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয় ।পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি

প্রশ্ন-৬. রাষ্ট্রের আদি সংগঠন কী? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: রাষ্ট্রের আদি সংগঠন হলো পরিবার। সমাজ স্বীকৃত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রীর একত্রে বসবাস করার মাধ্যমে পরিবার গঠিত হয়। বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে এক বা একাধিক পুরুষ ও মহিলা তাদের সন্তানাদি, পিতামাতা এবং ঘনিষ্ঠ পরিজন নিয়ে যে সংগঠন গড়ে ওঠে তাকে পরিবার বলে। পরিবারের মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে। মানব সমাজের প্রথম সংঘ প্রতিষ্ঠান হলো পরিবার। তারপর পরিবারের মধ্যদিয়ে গোষ্ঠী এবং গোত্রের আর্বিভাব হয়েছে। গোত্র থেকে সময়ের পরিক্রমায় বিবর্তনের ধারায় সমাজ এবং সমাজ থেকে রাষ্ট্র ধারণার উদ্ভব ঘটেছে। এই রাষ্ট্রের ভিত্তিমূল সূচিত হয়েছিল পরিবার গঠনের মধ্যে দিয়ে। তাই বলা হয়, পরিবার হলো রাষ্ট্রের আদি সংগঠন।

প্রশ্ন-৭. যে চিন্তা ভাবনা মানুষের আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রিত করে সেটি সম্পর্কে লেখ।

উত্তর: নৈতিকতা মানুষের আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে। নৈতিকতার ইংরেজি প্রতিশব্দ Monality যা ল্যাটিন Moralitas শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ আচরণ (manner), চরিত্র (character) বা যথার্থ (proper behaviour)। ন্যায় ও সঠিক পথে থাকা হচ্ছে নৈতিকতা। এটি কতকগুলো ধ্যানধারণা ও আদর্শের সমষ্টি বা সমাজ স্বীকৃত আচরণবিধি। এর প্রভাবে মানুষ আইন মেনে চলে, শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ থেকে বিরত থাকে এবং রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে । নৈতিকতা মূলত ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ব্যাপার। এর পিছনে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের কর্তৃত্ব থাকে‌ না। বিবেকের দংশনই নৈতিকতার বড় রক্ষাকবচ।

 প্রশ্ন-৮. “স্বচ্ছতা” কীসের পূর্বশর্ত? ব্যাখ্যা দাও। কো. ১৬/

উত্তর: ‘স্বচ্ছতা’ সুশাসনের পূর্বশর্ত। স্বচ্ছতার মাধ্যমে মানুষ উপলব্ধি করতে পারে, কোন কর্মকাণ্ড কতটুকু ন্যায়সঙ্গত বা বৈধ। এককথায় স্বচ্ছতা হলো সুস্পষ্টতা। একটি দেশের বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক কাজকর্ম কীভাবে চলছে, কোন সিদ্ধান্তের পেছনের কারণগুলো কী ইত্যাদি জনগণের কাছে পরিস্কার থাকাই হলো স্বচ্ছতা। স্বচ্ছতার স্বার্থে বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া কোন তথ্য গোপন করা যাবে না। এরকম স্বচ্ছতার নীতি সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে। তাই স্বচ্ছতাকে সুশাসনের পূর্বশর্ত বলা হয়। 

প্রশ্ন-৯. কোন শাস্ত্র নাগরিকের অতীত, বর্তমান ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা দেয়? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা দেয় । পৌরনীতি হলো নাগরিকতা বিষয়ক একটি মৌলিক সামাজিক বিজ্ঞান। নাগরিকের সব বিষয় নিয়ে এটি আলোচনা করে। অতীতে নাগরিকের কী মর্যাদা ছিল, কারা নাগরিক হিসেবে গণ্য হতো, নাগরিক হিসেবে কী কী অধিকার রাষ্ট্র থেকে লাভ করত, পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকরা কী কী কর্তব্য পালন করত পৌরনীতি ও সুশাসন তা আলোচনা করে। আবার বর্তমানে নাগরিকরা কী কী মর্যাদা পাচ্ছে, সরকারের সাথে নাগরিকের সম্পর্ক কী, রাষ্ট্রের প্রকৃতি, সরকার পদ্ধতি কী হবে ইত্যাদি বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করে পৌরনীতি। পাশাপাশি পৌরনীতি অতীত ও বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যৎ নাগরিক জীবন কেমন হতে পারে, কোন ধরনের শাসনকর্তা ও সংবিধান নাগরিকদের জন্য উত্তম তারও দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। এভাবে পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিক জীবনের অতীত ও বর্তমান পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা প্রদান করে। 

প্রশ্ন-১০, পৌরনীতি ও সুশাসন কীভাবে ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করে?

উত্তর: বিভিন্ন বিষয় আলোচনার মাধ্যমে পৌরনীতি ও সুশাসন ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করে। পৌরনীতি ও সুশাসন অধ্যয়নের দ্বারা ছাত্রছাত্রীরা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সংগঠনের উৎপত্তি, সাংগঠনিক কাঠামো ও কার্যাবলি, নাগরিকতা, অধিকার ও কর্তব্য ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারে এবং ভবিষ্যতে এগুলো কী রূপ পরিগ্রহ করবে বা করা উচিত, সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। ফলে ছাত্রছাত্রীদের রাজনৈতিক জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত হয় এবং ভবিষ্যতে তারা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে।

প্রশ্ন-১১. পৌরনীতির সাথে ইতিহাসের দুটি সম্পর্ক লেখো। সে কো. 20/

উত্তর: পৌরনীতি ও সুশাসন হচ্ছে নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান, আর ইতিহাস হলো মানবজাতির সামগ্রিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি । তাই এ দুই বিষয়ের সম্পর্ক নিবিড় । পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ইতিহাসের দুটি সম্পর্ক নিচে দেওয়া হলো— ১. পৌরনীতি ও সুশাসনে আলোচিত বিষয়সমূহ যেমন— পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র প্রভৃতি সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান অতীতে কেমন ছিল, কীভাবে তা বিবর্তিত হয়ে বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করেছে ইতিহাস পাঠ করলে তা জানা যায় । ২. ঐতিহাসিক তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচনা অসম্পূর্ণ থাকে। তেমনি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচিত না হলে ইতিহাসের আলোচনাও খণ্ডিত ও অনেকাংশে নিরর্থক। 

 প্রশ্ন-১২. সুশাসনের সাথে জবাবদিহিতার সম্পর্ক নিরূপণ করো। রিং. বো. ১৬/

উত্তর: সুশাসনের (Good Governance) সাথে জবাবদিহিতার সম্পর্ক নিবিড়। রাষ্ট্রে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ ও চর্চার ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা সুশাসনকে নিশ্চিত করে।

বাকস্বাধীনতাসহ সকল নাগরিক অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের অনুশাসন, আইনসভার নিকট শাসন বিভাগের জবাবদিহিতা সুশাসনের পরিচয় বহন করে। আর সুশাসনের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা হলো প্রথম শর্ত। জবাবদিহিতা না থাকলে দায়িত্বশীলতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় না। ফলে দুর্নীতির প্রকোপ বাড়ে। আইনের অনুশাসনও প্রতিষ্ঠিত হয় না। অর্থাৎ সুশাসনের জন্য জবাবদিহিতা অপরিহার্য।

  প্রশ্ন-১৩. “সরকারের সংবেদনশীলতার ওপর সুশাসন নির্ভর করে ” – ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর: সংবেদনশীলতা হলো শাসনযন্ত্রের এমন কতিপয় গুণাবলি, যার মাধ্যমে জনসাধারণ, বিশেষত চরম দরিদ্র, দরিদ্র এবং প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মর্যাদাপূর্ণ জীবন নির্বাহের যাবতীয় বৈধ প্রয়োজন ও দাবি পূরণ সম্ভব হয়। অর্থাৎ সরকার জনসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে যথাসময়ে সাড়াদান করতে প্রস্তুত থাকবে। এটাই মূলত সংবেদনশীলতা। তাই বলা যায়, সরকারের সংবেদনশীলতার ওপর সুশাসন অনেকটা নির্ভর করে।

প্রশ্ন-১৪. সুনাগরিকতার শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে পৌরনীতির জ্ঞান কেন দরকার? বুঝিয়ে দাও ।

উত্তর: পৌরনীতি পাঠের মাধ্যমে নাগরিকতার অর্থ ও প্রকৃতি, নাগরিকতা অর্জন ও বিলোপ, সুনাগরিকতা, সুনাগরিকের প্রতিবন্ধকতা ও তা দূরীকরণের উপায়, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যবোধ ইত্যাদি বিষয় বিস্তারিতভাবে জানা যায়। পৌরনীতি পাঠ করে নাগরিকরা সৎ, ন্যায়বান, বুদ্ধিমান, আত্মসংযমী, দায়িত্বশীল, বিবেকবান, সত্যনিষ্ঠ হয়ে গড়ে ওঠে। একমাত্র পৌরনীতির জ্ঞান মানুষকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। সে কারণে সুনাগরিকের শিক্ষা। গ্রহণের ক্ষেত্রে পৌরনীতির জ্ঞান একান্ত আবশ্যক। 

 প্রশ্ন-১৫. পৌরনীতি ও সুশাসন কীভাবে নাগরিক চেতনা বৃদ্ধি করে?

উত্তর: পৌরনীতি ও সুশাসন রাজনীতি সম্পর্কিত সামগ্রিক বিষয় আলোচনা করার মাধ্যমে নাগরিক চেতনা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । পৌরনীতি ও সুশাসন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অতীত ও বর্তমান, এগুলোর বর্তমান প্রকৃতি, কার্যাবলি ও গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করে। এর ফলে এই শাস্ত্র পাঠে মানুষের রাজনৈতিক জ্ঞান ও নাগরিক চেতনা বৃদ্ধি পায়।

 প্রশ্ন-১৬, উন্নয়নমূলক গণতন্ত্র বলতে কী বোঝ?

উত্তর: রাষ্ট্রচিন্তাবিদ জ্যা জ্যাক রুশো এবং জন স্টুয়ার্ট মিল এর চিন্তা ও লেখনির মধ্য দিয়ে উন্নয়নমূলক গণতন্ত্র ধারণার‌ বিকাশ ঘটে।

উন্নয়নমূলক গণতন্ত্রে সক্রিয় নাগরিকতা গঠনে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ধারণায়

শাসনকাজে নাগরিকের অংশগ্রহণকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। জ্যা জ্যাক রুশো উন্নয়নমূলক গণতন্ত্রে নাগরিকের অংশগ্রহণকে বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন। 

 প্রশ্ন-১৭. সুশাসনের বৈশিষ্ট্য ‘মতৈক্যভিত্তিক’ – বিষয়টি ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: যে কোনো রাষ্ট্রে ও সমাজে নানা মতের মানুষ, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব বিদ্যমান। এসব মতসমূহের মধ্যে প্রায়ই বিরোধ দেখা দেয়। এ বিরোধের মাত্রা যে রাষ্ট্রে বেশি সে রাষ্ট্রে সুশাসন নেই। এজন্য সমাজে বহুমত ও গোষ্ঠীর স্বার্থের মধ্যকার ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। সুশাসনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো সমগ্র জাতিকে বিভিন্ন ইস্যুতে এতাবদ্ধ করার চেষ্টা করা। সুশাসনের এ বৈশিষ্ট্যটিই ‘মতৈক্যভিত্তিক’ হিসেবে।

প্রশ্ন-১৮. সুশাসন পৌরনীতির দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয়? ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: পৌরনীতির একটি অংশ হলো সুশাসন। সুশাসন পৌরনীতির দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। সুশাসন শাসনের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানাদি নিয়ে আলোচনা করার ক্ষেত্রে পৌরনীতির সহায়তা নিয়ে থাকে। শোসন, আইন ও বিচার বিভাগ ইত্যাদি সুশাসনের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এ সকল প্রতিষ্ঠানাদি সম্পর্কে আলোচনার জন্য পৌরনীতির সহায়তা নেয়া আবশ্যক। এভাবে সুশাসন পৌরনীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়। 

প্রশ্ন-১৯. পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতি দুটি স্বতন্ত্র বিষয়- ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতির মধ্যে গভীর সম্পর্ক থাকলেও বস্তুত বিষয় দুটি স্বতন্ত্র। পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য, নাগরিকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করে। অপরদিকে অর্থনীতি অভাব, চাহিদা, উৎপাদন, বণ্টন, মুদ্রা, ব্যাংক, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর, শুল্ক ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। উভয় শাস্ত্রের আলোচ্য বিষয়ে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান। এ জন্যেই পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতি দুটি স্বতন্ত্র বিষয়

প্রশ্ন-২০, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিমূর্ত বিষয় বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: নাগরিকের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের সাথে নানা বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এসব বিষয়ের সবগুলোর বস্তুগত কাঠামো নেই। কিছু বিষয় আছে যেগুলো নাগরিকের অনুশীলনের মধ্যদিয়ে ফুটে ওঠে। যেসব বিষয় অনুশীলনের মাধ্যমে প্রকাশ পায় সেগুলোকেই বিমূর্ত বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অর্থাৎ নাগরিকের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে যেসব বিষয় কেবল অনুশীলনের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয় সেগুলোই হলো রাজনৈতিক ও সামাজিক বিমূর্ত বিষয়। আইন, স্বাধীনতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ প্রভৃতি হলো রাজনৈতিক ও সামাজিক বিমূর্ত বিষয় ।

প্রশ্ন-২১. পৌরনীতির পরিধি ও বিষয়বস্তু সুদূরপ্রসারী- বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: পৌরনীতি নাগরিক হিসেবে মানুষের অধিকার ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনা করে। মানুষের কার্যাবলি, অভ্যাস ও আচরণ বিশ্লেষণ এবং রাষ্ট্র ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি পর্যালোচনার আলোকে আদর্শ নাগরিক জীবনের শিক্ষা দিয়ে থাকে। নাগরিক জীবনের সামগ্রিক পর্যালোচনা পৌরনীতির বিষয়বস্তু। নাগরিকের জীবন ও কার্যাবলি যতদূর বিস্তৃত, পৌরনীতির পরিধি ও বিষয়বস্তুও ততদূর প্রসারিত। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, পৌরনীতির পরিধি ও বিষয়বস্তু সুদূরপ্রসারী।

প্রশ্ন-২২. বিশ্ব আজ একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে— ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: বিশ্ব আজ একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে— এই ধারাটি প্রথম প্রকাশ করেন মার্শাল ম্যাকলুহান। মূলত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ মানুষে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়টি এখানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আধুনিক বিশ্বকে বলা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিশ্ব। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিষয়বস্তু মূলত কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ট্যাব, নোটবুক, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন প্রভৃতি ব্যবহৃত হচ্ছে। যার ফলে খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় পৃথিবী ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। মানুষে মানুষে দূরত্ব কমে আসছে। কেননা মুহর্তেই পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত যোগাযোগ করা যাচ্ছে। একটি গ্রামে যেমন মানুষ একসাথে বসবাস করে তেমনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে পুরো পৃথিবী আজ একটি গ্রামের মতো হয়ে উঠেছে। সেকারণেই বলা হয়, বিশ্ব আজ একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে।

প্রশ্ন-২৩, নাগরিকতা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভ্রমণ শুরু করেছে কীভাবে?

উত্তর: একজন মানুষ একটি দেশের যেমন নাগরিক, একই সাথে বিশ্ব সমাজেরও সদস্য। তাই কালের বিবর্তনে নাগরিকতা এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভ্রমণ শুরু করেছে। আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বের প্রতিটি দেশই একে অপরের সাহায্যপ্রার্থী এবং বন্ধুত্ব স্থাপনে আগ্রহী। তাই জাতিসংঘসহ অনেক আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং উঠছে।

source: অক্ষর পত্র প্রকাশনী বই

এই কন্টেন্ট এর সারবস্তু গৃহীত হয়েছে © পৌরনীতি সুশাসন বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

[ad_2]

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url