ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্র HSC: চতুর্থ অধ্যায় সকল অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
[ad_1]
ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্র HSC চতুর্থ অধ্যায় সকল অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়ার হয়েছে। চতুর্থ অধ্যায় নাম হচ্ছে উমাইয়া খিলাফত।
প্রশ্ন -১. মুজাবিয়াকে আরব বিশ্বের প্রথম রাজা বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।……….. বো. ১৯৮; সকল কোর ২০১৮
উত্তর: মুয়াবিয়া উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের প্রচলন করেন, তাই তাকে আরবনের প্রথম রাজ উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা উচ্চাভিলাষী মুয়াবিয়া খিলাফত লাভের পর সাধারণতন্ত্রের পরিবর্তন ঘটিয়ে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি হযরত ইমাম হাসান (রা)-এর সাথে স্বাক্ষরিত সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে ৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে বসরার শাসনকর্তা মুগিরার প্ররোচনায় নিজের জ্যেষ্ঠপুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র চালু করেন। পরবর্তী সময়ে আব্বাসি খলিফাসহ অন্যান্য মুসলিম শাসকেরা মুয়াবিয়ার নীতি অনুসরণ করেন। এজন্য তাকে আরবদের প্রথম রাজা বলা হয়।
প্রশ্ন-২. খলিফা আলী (রা) এবং মুয়াবিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: খলিফা আলী (রা) এবং মুয়াবিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রধান কারণ ছিল হাশেমি ও উমাইয়া বংশগত দ্বন্দ্ব।মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশের দুইটি শাখা হাশেমি ও উমাইয়া গোত্র প্রায় একশ বছর ধরে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের মে লিপ্ত ছিল। মুয়াবিয়া ছিলেন উমাইয়া বংশোদ্ভূত আর হযরত আলী (রা) ছিলেন হাশেমি গোত্রের সদস্য। তাই হযরত আলী (রা)-এর খিলাফত লাভ উমাইয়াদের ক্ষুব্ধ করে। খলিফা আলী (রা) সিরিয়ার শাসনকর্তা মুয়াবিয়াকে পদত্যাগ করতে বললে তিনি খলিফার আদেশ অমান্য করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন।
প্রশ্ন-৩. কারবালার হত্যাকাণ্ডকে বিষাদময় ঘটনা বলা হয় কেন?
উত্তর: কারবালার হত্যাকাণ্ডে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে নবি করিম (স)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেনের শিরশ্ছেদ করা হয়। তাই এ হত্যাকাণ্ডকে বিষাদময় ঘটনা বলা হয়। ৬০ হিজরির ১০ মহররম কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসেনের বাহিনী ও ইয়াজিদের সেনাবাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। ইয়াজিদ বাহিনী ফোরাত নদীর পাড় দখল করে ইমাম হোসেনের শিবিরকে পানি থেকে বঞ্চিত করে। ফলে পানির অভাবে ইমাম শিবিরে হাহাকার শুরু হয়। ইমাম হোসেন নিজপুত্র শিশু আসগরকে নিয়ে ফোরাত নদীতে পানির জন্য গেলে আসগর শরবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। পরে পাপিষ্ঠ সীমার অনেক কষ্ট দেওয়ার পর তরবারি দ্বারা ইমাম হোসেনের শিরশ্ছেদ করে। নবি করিম (স)-এর দৌহিত্রের এ নির্মম হত্যাকাণ্ডকে তাই বিষাদময় ঘটনা বলা হয়।
প্রশ্ন-৪. দিওয়ান আল খাতাম বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর: দিওয়ান আল পাতাম বলতে উমাইয়া খলিফা মুয়াবিয়ার গঠিত রেজিস্ট্রি বিভাগকে বোঝায় । কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে প্রাদেশিক সরকারের লিখিত সংযোগ সাধনের জন্য খলিফা মুয়াবিয়া ‘দিওয়ান আল খাতাম’ বা রেজিস্ট্রি বিভাগ নামে একটি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। কেন্দ্রীয় সরকার যেসব হুকুমনামা প্রদেশিক সরকারকে প্রদান করত সেগুলো জাল হওয়া ঠেকাতে এবং সেগুলো সংরক্ষণের জন্য এ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
প্রশ্ন-৫. দিওয়ানুল বারিদ কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: উমাইয়া খলিফা মুয়াবিয়া কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ডাক বিভাগই ‘দিয়ানুল বারিদ’ হিসেবে পরিচিত। ‘দিওয়ানুল বারিদ’ এর শাব্দিক অর্থ ডাক বিভাগ। দিয়ানুল বারিদ রাষ্ট্রের সংবাদ আদান-প্রদানের জন্য কাজ করত। সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের সংবাদ আদান-প্রদানের জন্য মুয়াবিয়া প্রতি ১২ মাইল অন্তর একটি করে ডাকঘর স্থাপন। করেন। ঘোড়া ও উটের সাহায্যে এক ডাকঘর থেকে অন্য ডাকঘরে সংবাদ আদান-প্রদান করা হতো। এ বিভাগকে বলা হতো ‘দিওয়ানুল বারিদ’ এবং এর প্রধান কর্মকর্তাকে বলা হতো ‘সাহিব উল বারিদ’।
প্রশ্ন-৬. ডাক বিভাগের উন্নতিতে খলিফা আবদুল মালিকের কী পদক্ষেপ ছিল?
উত্তর: খলিফা আবদুল মালিক ডাক ব্যবস্থার সংস্কার করে এ বিভাগের উন্নয়ন করেন। উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের শাসনামলে ডাক বিভাগের ব্যাপক সংস্কার সাধিত হয়। তিনি পারসিকদের পদ্ধতি অনুসরণ করে ডাক চালান প্রথার প্রচলন করেন। সাম্রাজ্যের বড় বড় রাস্তার পাশে তিনি ডাকচৌকি নির্মাণ করেন। ডাক বিভাগের কাজ ছিল- ১. সরকারি চিঠিপত্র ও আদেশ নিষেধ আদান-প্রদান; ২. সরকারি কর্মচারীদের ডাকগাড়ির মাধ্যমে যাতায়াত; ৩. প্রয়োজনে যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত সৈন্য ও রসদ দ্রব্যাদি সরবরাহ এবং ৪. গোয়েন্দা বিভাগের কাজ সম্পাদন। এসব কাজের জন্য ডাক বিভাগকে খলিফার কান এবং চোখ বলা হতো।
প্রশ্ন-৭. দিয়ানুল রাসায়েল কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের সময়কালে সরকারি কাগজপত্র সংরক্ষণকারী দপ্তর হচ্ছে দিয়ানুল রাসায়েল । উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ৬৮৫ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করার পর উমাইয়া শাসনকে সুদৃঢ়ীকরণের জন্য বেশ কিছু যুগোপযোগী পদক্ষেপ নেন। এদের একটি হলো দিওয়ানুল রাসায়েল নামক নতুন দপ্তর স্থাপন। সেখানে খলিফার আদেশ, নিষেধ, দস্তাবেজ, চুক্তিপত্র, নথিপত্র ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হতো।
প্রশ্ন-৮. মুয়াবিয়া সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করেন কেন?
উত্তর: শাসনকার্যের সুবিধার জন্য খলিফা মুয়াবিয়া (রা) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক রাজধানীতে সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করেন। মুয়াবিয়ার সময় কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে আরবি ভাষায় এবং প্রাদেশিক সচিবালয়গুলোতে আরবি, গ্রিক ও ফারসি ভাষার মাধ্যমে শাসনকার্য পরিচালনা করা হতো। কেন্দ্রীয় সচিবালয় প্রাদেশিক সচিবালয়গুলোর কার্যক্রমের ওপর নজরদারি করত। প্রাদেশিক সচিবালয়গুলোর কার্য পরিচালিত হতো কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের নির্দেশে।
প্রশ্ন-৯. খলিফা আবদুল মালিকের আরবি ভাষা জাতীয়করণ বিষয়ে ধারণা দাও। (ঢাকা বোর্ড ২০১৭/
উত্তর: রাষ্ট্রে আরব জাতীয়তাবাদের প্রতিফলন ঘটানোর লক্ষ্যে আবদুল মালিক আরবি ভাষা জাতীয়করণ করেন। খলিফা আবদুল মালিক আর জাতীয়তাবাদের উন্মেষ এবং রাষ্ট্রে সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য ফারসি, সিরীয় ও গ্রিকসহ প্রচলিত বিভিন্ন ভাষা বাদ দিয়ে আরবিকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দেন এবং সরকারি কাজে ও হিসাবপত্র লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে আরবি ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দেন। ৬৯৫-৬৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এ মর্মে একটি আদেশ জারি করেন। এর ফলে আরবরা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে চাকরি লাভ করে।
প্রশ্ন-১০. কুব্বাতুস সাখরা বা Dome of the Rock কী? / সকল বোর্ড ২০১৯ /
উত্তর: ৬৯১ খ্রিষ্টাব্দে জেরুজালেমে মহানবি (স) এর মিরাজের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র পাথরের ওপর উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক অষ্টকোণাকৃতির যে স্থাপত্যটি নির্মাণ করেন, তাই কুব্বাতুস সাখরা বা ডোম-অধ-দি রক নামে পরিচিত। খলিফা আবদুল মালিক তার চরম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার উদ্দেশ্যে কুব্বাতুস সাখরা নির্মাণ করেছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের মক্কা ও মদিনায় সুদৃঢ় শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। পবিত্র কাবাগৃহ মক্কায় অবস্থিত হওয়ায় প্রত্যেক বছর বিপুলসংখ্যক মুসলমান এখানে হজ পালন করতে যেত। হজযাত্রীদেরকে মক্কা থেকে জেরুজালেমের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য আবদুল মালিক কুব্বাতুস সাখরা Dome of the Rock নির্মাণ করেন। তিনি নিজের অনুসারীদের মক্কার পরিবর্তে এখানে হজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন-১১. খলিফা আবদুল মালিকের আরব জাতীয়তাবাদ নীতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: খলিফা আবদুল মালিকের আরব জাতীয়তাবাদ নীতি বলতে রাষ্ট্রে আরব জাতীয়তাবাদের প্রতিফলন ঘটানো এবং সুস্থ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে তার গৃহীত পদক্ষেপকে বোঝায়। আবদুল মালিকের শাসননীতির মূল বিষয় ছিল আরব জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ। তিনি শাসনক্ষমতায় বসে দেখলেন যে, আরব মুসলিমরা রাজ্যশাসন করলেও মূলত অনারব জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে পারসিক ও রোমানরা উমাইয়া খিলাফতের প্রশাসন পরিচালনা করছে। এমতাবস্থায় প্রশাসনে বিজাতীয় প্রভাব হ্রাস এবং আরব প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে খলিফা রাজকীয় দফতরসমূহে কেবল আরবি ভাষাভাষীদের চাকরি দেওয়া বিধান চালু করেন। অবশ্য এর দ্বারা প্রশাসনে। যে আরব জাতির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা নয়। বহু অনারব দ্রুত আরবি ভাষা রপ্ত করে প্রশাসনে তাদের প্রাধান্য বজায় রাখেন। ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টি বলেন, ‘প্রশাসনকে আরবীয়করণ, প্রথম বিশুদ্ধ আরবি মুদ্রার প্রচলন, ডাক বিভাগের উন্নতি সাধন এবং জেরুজালেমে ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থাপত্য ‘কুব্বাতুস সাখরা’ নির্মাণ এ যুগের আরব জাতীয়তাবাদের সাক্ষ্য দেয়।
প্রশ্ন-১২. আবদুল মালিককে কেন উমাইয়া খিলাফতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়?
উত্তর: সাম্রাজ্যের সকল বিদ্রোহ দমন করে উমাইয়া বংশের শাসনকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য আবদুল মালিককে উমাইয়া খিলাফতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ৬৯১ খ্রিষ্টাব্দে কুফার শাসনকর্তা মুসাবের বিদ্রোহ এবং ৬৯২ খ্রিস্টাব্দে হেজাজে নিজেকে খলিফা ঘোষণাকারী আব্দুল্লাহ বিন যুবায়েরের বিদ্রোহ সফলভাবে দমন করেন। এর ফলে কারবালা যুদ্ধের পর সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়া উমাইয়াবিরোধী বিদ্রোহের অবসান ঘটে। এছাড়া প্রশাসনের আরাবীয়করণ করে আবদুল মালিক উমাইয়া খিলাফতের ভিত মজবুত করেন। এজন্য তাকে উমাইয়া খিলাফতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
প্রশ্ন-১৩. খলিফা আবদুল আবদুল মালিককে রাজেন্দ্র বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো । / রা. বো, যাবো, ব. বো. ১৯; সকল বোর্ড ২০১৮/
উত্তর: উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের (৬৮৫-৭০৫ খ্রি.) চারজন পুত্র পরবর্তী সময়ে খলিফা হওয়ার কারণে তাকে রাজেন্দ্র বা Father of Kings বলা হয়। ৬৮৫ খ্রিস্টাব্দে খলিফা আবদুল মালিক সিংহাসনে আরোহণ করেন। ৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন । তার মৃত্যুর পর তার পুত্র আল-ওয়ালিদ (৭০৫-১৫ খ্রি.), সুলায়মান (৭১৫-১৭ খ্রি.), দ্বিতীয় ইয়াজিদ (৭২০-২৪ খ্রি.) এবং হিশাম (৭২৪ ৪৩ খ্রি.) উমাইয়া সিংহাসনে আরোহণ করেন। এজন্য আবদুল মালিককে রাজেন্দ্র বা Father of Kings বলা হয়।
প্রশ্ন-১৪. আল ওয়ালিদকে শ্রেষ্ঠ বিজেতা বলা হয় কেন?
উত্তর: মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তারে অপরিসীম কৃতিত্বের পরিচয় দেওয়ার কারণে আল ওয়ালিদকে শ্রেষ্ঠ বিজেতা বলা হয়। আল ওয়ালিদ দশ বছরের রাজত্বকালে কয়েকজন সুযোগ্য সেনানায়কের সহযোগিতায় মুসলিম সাম্রাজ্য পশ্চিমে স্পেন থেকে পূর্বে ভারতবর্ষ এবং উত্তরে মধ্য এশিয়ার ফারগানা থেকে দক্ষিণে ইয়েমেন পর্যন্ত বিস্তৃত করেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমরের (রা) পর তার সময়ই মুসলিম খিলাফত সবচেয়ে বেশি সম্প্রসারিত হয়। এজন্য আল ওয়ালিদকে শ্রেষ্ঠ বিজেতা বলা হয়।
প্রশ্ন-১৫. সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণটি লেখো।
উত্তর: আরবদের কিছু বাণিজ্যিক জাহাজ সিন্ধুর জলদস্যু কর্তৃক লুণ্ঠিত হলে হাজ্জাজের দাবি অনুসারে রাজা দাহির কর্তৃক ক্ষতিপূরণ দানে অস্বীকৃতিই ছিল সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণ। অষ্টম শতকের শুরুতে আরবদের ৮টি বাণিজ্যিক জাহাজ সিন্ধুর দেবল কন্দরে জলদস্যু কর্তৃক লুণ্ঠিত হলে খলিফা আল ওয়ালিদের পূর্বাঞ্চলীয় শাসনকর্তা হাজ্জাজ সিন্ধুর রাজা দাহিরের নিকট ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। কিন্তু রাজা দাহির এ
ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করেন। ফলে সিন্ধু আক্রমণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে, যা ছিল সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণ।
প্রশ্ন-১৬. ‘জাবালুত তারিক’— এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
উত্তর: ‘জাবালুত তারিক’ বলতে তারিকের পাহাড়কে বোঝায়। খলিফা আল ওয়ালিদের শাসনামলে স্পেন অধিকারের জন্য তারিক বিন জিয়াদকে স্পেনে পাঠানো হয়েছিল। স্পেন যাত্রাকালে তারিক তার সেনাবাহিনী এবং রণতরী নিয়ে স্পেনের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে পার্বত্য এলাকায় অবতরণ করেন। তারিকের অবতরণ করা এ স্থানটি জাবাল আত-তারিক (আধুনকি জিব্রালটার) নামে পরিচিত ।
প্রশ্ন-১৭. খলিফা সুলাইমানকে আশীর্বাদের চাবি বলা হয় কেন?ঢো বো., দি. বো, কু. বো., চ. বো, সি. বো. ১৯, সকল বোর্ড ২০১৬/
উত্তর: ইরাকের বন্দিদের মুক্তিদানের জন্য খলিফা সুলায়মানকে আশীর্বাদের চাবি বলা হয়। উমাইয়া শাসনামলে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কুফা ও বসরায় ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা)-এর অনুসারীদের বিদ্রোহ দমন করে ইরাকের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। এ সময় তিনি ইরাকের হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। খলিফা সুলায়মান ক্ষমতায় আরোহণের পর হাজ্জাজের বন্দিকৃত কয়েদিদের মুক্ত করে দেন। এ কারণে তাকে আশীর্বাদের চাবি বলা হয়।
প্রশ্ন-১৮. মাওয়ালি নীতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: উমাইয়া খলিফারা মাওয়ালিদের (নওমুসলিম) জন্য যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তাকেই মাওয়ালি নীতি বলা হয়। উমাইয়া খলিফা দ্বিতীয় ওমরের আগ পর্যন্ত মাওয়ালিদের দ্বিতীয় শ্রেণির মুসলমানের মর্যাদা দেওয়া হতো। খলিফা আবদুল মালিক তাদের ওপর জিজিয়া ও খারাজ আরোপ করেন। কিন্তু দ্বিতীয় ওমর ক্ষমতায় আরোহণ করে তাদের প্রতি এ নীতি পরিহার করেন। তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে মাওয়ালিদের নিয়োগ দেন। এছাড়া তাদের ওপর অতিরিক্ত কর রহিত করেন। উমাইয়ারা আফ্রিকানদের কাছ থেকে যে নিষ্ঠুর শিশুকর আদায় করত তাও তিনি রহিত করেন।
প্রশ্ন-১৯. ওমর-বিন-আবদুল আজিজকে পঞ্চম ধার্মিক খলিফা বলা হয় কেন?
উত্তর: খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ উমাইয়া শাসনামলে খুলাফায়ে রাশেদিনের শাসনব্যবস্থা চালু করায় তাকে ইসলামের পঞ্চম ধার্মিক খলিফা বলা হয়। উমাইয়া খলিফাদের শাসনব্যবস্থা ছিল ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা ও নিষ্ঠুরতায় পরিপূর্ণ। খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ সিংহাসনে আরোহণ করে তাদের এ শাসননীতির স্থলে কুরআন ও সুন্নাহভিত্তিক শাসন চালু করেন। তিনি অপরাপর উমাইয়া খলিফাদের ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা ও নিষ্ঠুরতা পরিহার করে প্রজাদের কল্যাণে শাসন পরিচালনা বিন আবদুল আজিজ ইসলামের ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছেন। এসব কারণে তাকে খুলাফায়ে রাশেদিনের পর পঞ্চম ধার্মিক খলিফা বলা হয়।
করেন। এমনকি নিজের স্ত্রীর গহনাদিও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করেন। ন্যায়পরায়ণ ও ধার্মিক শাসক হিসেবে ওমর
প্রশ্ন-২০. উমাইয়া সাধু বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: উমাইয়া সাধু বলতে উমাইয়া খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজকে বোঝানো হয় ।উমাইয়া খলিফাদের রাজত্বকালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল দেশজুড়ে ক্ষমতার সংঘর্ষ, বিশ্বাসঘাতকতা, ষড়যন্ত্র ও নিষ্ঠুরতা।এমন সময় সরল, অনাড়ম্বর, ধর্মানুরাগী, কর্তব্যপরায়ণ ও প্রজাবৎসল খলিফা হিসেবে ওমর বিন আবদুল আজিজের সিংহাসনে আরোহণ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রেম ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী ছিলেন। এরূপ উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও ধর্মভীরুতার জন্যই খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজকে উমাইয়া সাধু বলা হয়।
প্রশ্ন-২১, খলিফাদের সুষ্ঠু উত্তরাধিকার নীতির অভাবকে উমাইয়াদের পতনের কারণ বলা হয় কেন?
উত্তর: খলিফাদের সুষ্ঠু উত্তরাধিকার নীতির অভাবে অনেক অযোগ্য খলিফা ক্ষমতায় আসেন এবং উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়, যা উমাইয়াদের পতনকে ত্বরান্বিত করে। উমাইয়া যুগে গণতন্ত্রের পরিবর্তে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। যোগ্যতা ও সর্বসম্মতির পরিবর্তে উত্তরাধিকার সূত্রে পরবর্তী খলিফা নির্বাচিত হতেন। খলিফার মৃত্যুর পর পরবর্তী খলিফারা যোগ্যতার ভিত্তিতে চিন্তা না করে নিজ নিজ পুত্রদের পরবর্তী খলিফা নিয়োগ করতেন। যার ফলস্বরূপ অনেক সময়ই অযোগ্য ব্যক্তিরা ক্ষমতায় আসেন। তাদের অপশাসন
উমাইয়া শাসনের পতনকে ত্বরান্বিত করে ।
source: অক্ষর পত্র প্রকাশনী বই
এই কন্টেন্ট এর সারবস্তু গৃহীত হয়েছে © ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
[ad_2]