ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্র HSC: সপ্তম অধ্যায় সকল অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

[ad_1]

 

ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্র HSC সপ্তম অধ্যায় সকল অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়ার হয়েছে। সপ্তম অধ্যায় নাম হচ্ছে উওর আফ্রিকা ফাতেমি খিলাফত।

প্রশ্ন-১. ফাডেমি কারা? ব্যাখ্যা করো। 2018

উত্তর: ইসলামের চতুর্থ খলিফা ও মুহাম্মদ (স)-এর জামাতা হযরত আলী (রা) ও নবিকন্যা ফাতেমা (রা)-এর বংশধররা ইসলামের ইতিহাসে ফাতেমি নামে পরিচিত। ইসলামের একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক দল হলো শিয়া। এর দুটি প্রধান উপদল হলো ইছনা আশারিয়া এবং সার্বিয়া। সাৰিয়া বা সপ্তম ইমামে বিশ্বাসীদের বলা হয় ইসমাঈলীয় শিয়া। এরাই উত্তর আফ্রিকায় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে। ইসমাঈলীয়রা নিজেদের নবিকন্যা বিবি ফাতেমা এবং জামাতা হযরত আলী (রা)-এর বংশধর বলে দাবি করে। তাই তাদেরকে ফাতেমি বলা হয়। উবায়দুল্লাহ আল মাহদীর নেতৃত্বে ৯০৯ খ্রিস্টাব্দে উত্তর আফ্রিকায় প্রতিষ্ঠিত খিলাফত ফাতেমি খিলাফত’ নামে পরিচিত।

প্রশ্ন-২. উত্তর আফ্রিকায় প্রতিষ্ঠিত খিলাফতকে ফাতেমি খিলাফত বলার কারণ ব্যাখ্যা করো। /সকল বোর্ড ২০১৬/ 

উত্তর: ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা) ও নবিকন্যা হযরত ফাতেমা (রা) এর বংশধররা উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমি খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে এ খিলাফতকে ফাতেমি খিলাফত বলা হয়।

ইসমাইলীয়রাই উত্তর আফ্রিকায় উবায়দুল্লাহ আল মাহদীর নেতৃত্বে ৯০৯ সালে একটি খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন। তারা নিজেদেরকে রাসুল (স)-এর কন্যা বিবি ফাতেমা এবং জামাতা আলী (রা)-এর বংশধর বলে দাবি করেন। এজন্য তাদের প্রতিষ্ঠিত খিলাফতকে ফাতেমি খিলাফত বলা হয় ।

প্রশ্ন-৩. ইসমাঈলীয় কারা? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: ৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে শিয়া সম্প্রদায়ের ষষ্ঠ ইমাম জাফর সাদিকের মৃত্যুর পর শিয়া সম্প্রদায় যে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। তাদের একটি ইসমাঈলীয় হিসেবে পরিচিত।

জাফর সাদিক তার মৃত্যুর পূর্বে পুত্র ইসমাঈলকে ইমামতির দায়িত্ব দেন এবং পিতার মৃত্যুর আগেই ইসমাঈল মৃত্যুবরণ করলে দ্বিতীয় মুসা আল কাজিমকে ইমামতি দান করা হয়। যারা আল কাজিমকে ইমাম হিসেবে মেনে নিতে পারেনি তাদের ইসমাঈলীয় বলা হয়।

প্রশ্ন-৪. আবু আব্দুল্লাহ কীভাবে বার্বার কাতামা গোত্রে ইসমাইলীয় মতবাদ প্রচার করেন?

উত্তর: দাঈ বা প্রচারক প্রেরণের মাধ্যমে আবু আব্দুল্লাহ কাতামা গোত্রে ইসমাইলীয় মতবাদ প্রচার করেন। নবম শতাব্দীর মধ্যভাগে পারস্যবাসী আব্দুল্লাহ বিন মায়মুন আব্বাসি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে দাঈ (প্রচারক) প্রেরণ করেন। এ কারণে অতি অল্প সময়ের মধ্যে ইয়ামেন, বাহরাইন, সিন্ধু, মিসর ও উত্তর আফ্রিকায় ইসমাঈলীয় মতবাদ ছড়িয়ে পড়ে। ৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর তার শিষ্য আবু আব্দুল্লাহ আল হুসায়ন ইসমাইল প্রচারকাজের দায়িত্ব নেন। ৯০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি উত্তর আফ্রিকায় গিয়ে নিজেকে ইমাম মাহদীর অগ্রদূত বলে ঘোষণা দেন। অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও অনলবর্ষী বক্তা আবু আব্দুল্লাহর যোগ্য পরিচালনা, সুচতুর প্রচারণা ও চরিত্রবলে বার্বার কাতামা গোত্রে ইসমাইলীয় মতবাদ প্রচারিত ও প্রসারিত হয়।

প্রশ্ন-৫. উত্তর আফ্রিকায় শিয়াদের ধর্মীয় আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর: উত্তর আফ্রিকায় শিয়াদের ধর্মীয় আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল খিলাফত প্রতিষ্ঠা। উত্তর আফ্রিকার শিয়ারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য ধর্মীয় আন্দোলনের আশ্রয় নেয়। এ আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও সমর্থক ছিলেন পারস্যবাসী আব্দুল্লাহ বিন মাইমুন। তিনি নবম শতাব্দীর শেষ দিকে ফকির-দরবেশ ও বণিক ছদ্মবেশে উত্তর আফ্রিকায় ‘দাঈ’ বা প্রচারক পাঠাতে থাকেন। এ প্রচারকদের মাধ্যমে তিনি ইসমাঈলীয় মতবাদের বীজ বপনের মধ্য দিয়ে একটি ধর্মীয় আন্দোলনের সূত্রপাত করেন, যেটির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পর্যায়ক্রমে উত্তর আফ্রিকায় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা।

প্রশ্ন-৬, আৰু জাবদুল্লাহ আশ শিল্পীকে প্রাণদন্ড দেওয়া হয়েছিল কেন?

উত্তর: ফাতেমি বংশের প্রতিষ্ঠাতা উবায়দুল্লাহ আল মাহদী ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার জন্য আৰু আব্দুল্লাহ আশ শিল্পীকে প্রাণদণ্ড দেন। ইসমাঈলীয় মতবাদে বিশ্বাসী আবু আব্দুল্লাহ আশ শিল্পী তার অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা, অনলবর্ষী বক্তৃতা দ্বারা উত্তর আফ্রিকায় ফাতেনিদের শাসন প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি করেছিলেন। তিনিই ৯০৯ খ্রিস্টাব্দে মাহদীকে ‘উবায়দুল্লাহ আল মাহনী’ উপাধি দিয়ে ফাতেমি খিলাফতে বসান। তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন উবায়দুল্লাহ আল মাহদীকে সামনে রেখে তিনিই শাসন কাজ পরিচালনা করবেন। দূরদর্শী খলিফা মাহদী তা বুঝতে পেরে নিজের ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করার জন্য তার এক সময়ের মিত্র ও সুহৃদ আৰু আব্দুল্লাহ আশ শিল্পীকে নিমর্মভাবে হত্যা করেন।

প্রশ্ন-৭. আবু আব্দুল্লাহ আশ শিল্পী ইতিহাসে বিখ্যাত কেন?

উত্তর: ইফ্রিকিয়ায় (উত্তর আফ্রিকায়) ফাতেমি খিলাফত প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রাখায় আৰু আব্দুল্লাহ আশ শিল্পী ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন। নবম শতাব্দীর মধ্যভাগে দক্ষিণ পারস্যের আব্দুল্লাহ বিন মায়মুন পারস্যের আহওয়াজ ও সিরিয়ার সালমিয়াতে প্রচার কেন্দ্র স্থাপন করে আব্বাসি সাম্রাজ্যে শিয়া মতবাদ প্রচারের জন্য প্রচারক (দাঈ) প্রেরণ করেন। তখন তার একজন সুযোগ্য প্রতিনিধি ও শিষ্য ছিলেন আবু আব্দুল্লাহ আশ শিল্পী। ৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে আব্দুল্লাহ বিন মায়মুনের মৃত্যুর পর আবু আব্দুল্লাহ ইসমাইলীয় মতবাদ প্রচারকাজের দায়িত্ব নেন। তার অসাধারণ দক্ষতার কারণে ফাতেমি খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। এজন্য তিনি ফাতেমিদের ইতিহাসে তিনি আশ শিল্পী (সর্বোত্তম শিয়া) ও মুয়াল্লিম (উপদেষ্টা) নামে পরিচিত।

প্রশ্ন-৮. কাতামাদের বিদ্রোহ দমন আল মাহদীর বিদ্রোহ দমনের মধ্যে অন্যতম ছিল কেন? 

উত্তর: খলিফা আল মাহদীর শাসনামলের শক্তিশালী বিদ্রোহ ছিল কাতামাদের বিদ্রোহ। এ কারণেই এ বিদ্রোহ দমন আল মাহদীর বিদ্রোহ দমনের মধ্যে অন্যতম ছিল।

আফ্রিকার ফাতেমি আন্দোলন ছিল মূলত একটি আরববিরোধী আন্দোলন। প্রকৃতপক্ষে কায়রোয়ান ছিল আরব উপনিবেশ। এখানে বার্বাররা প্রাধান্য লাভ করলে কাতামা ও আরব গোত্রের মধ্যে বিবাদ ও প্রচণ্ড সংঘর্ষ বাধে। এ সংঘর্ষে কাতামা গোত্রের প্রায় ১,০০০ লোক নিহত হয়। এ ঘটনায় কাতামারা বিদ্রোহী হয়ে জাব প্রদেশে আলাদা রাজ্য স্থাপন করে। কয়েক জন সেনাপতির পরাজয়ের পর মাহদী নিজ পুত্র কায়েসকে সেখানে পাঠিয়ে এ বিদ্রোহ দমন করেন।

প্রশ্ন-৯. খলিফা আল মুইজের সিংহাসনারোহণের সাথে সাথে কীভাবে ফাতেমি খিলাফতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: খলিফা আল মুইজ শাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর সাম্রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলারক্ষা জনকল্যাণের জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। খলিফা আল মুইজ সিংহাসনে আরোহণ করার পর তিনি তার সাম্রাজ্যের সর্বত্র ভ্রমণ করেন। সাম্রাজ্যের সর্বত্র বিরাজমান। অবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিয়ে তিনি সাম্রাজ্যের সকল সমস্যা দূরীকরণ এবং উন্নতির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ফলে সাম্রাজ্যের বিদ্রোহী নেতাগণ, গোত্রপ্রধানগণ এবং প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ তার আনুগত্য স্বীকার করেন। তার আমলে সাম্রাজ্য সুখ ও সমৃদ্ধির স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করে।

প্রশ্ন-১০. আল মুইজ কীভাবে মিসর বিজয় করেন?

উত্তর: সেনাপতি জওহর ও আল সেকিল্পির সহায়তায় খলিফা আল মুইজ ৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে মিসর জয় করেন।

মিসর বিজয় ছিল খলিফা আল মুইজের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কীর্তি। এটি তার জীবনের স্বপ্ন ছিল। তৎকালীন মিসরীয় শাসক মালিক কাফুরের অযোগ্য ও কুশাসনে অতিষ্ঠ মানুষ আল মুইজকে মিসর বিজয়ে আমন্ত্রণ জানালে তিনি সেখানে অভিযান প্রেরণ করেন । প্রায় বিনা বাধায় তার সুযোগ্য সেনাপতি জওহর ও আল সেকিল্লি প্রথমে আলেকজান্দ্রিয়া ও পরে রাজধানী ফুস্তাত দখল করেন। এভাবে আল মুইজের মিসর জয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়।

প্রশ্ন-১১. আল মুইজকে শ্রেষ্ঠ ফাতেমি খলিফা বলা হয় কেন?

উত্তর: ফাতেমি খিলাফতের ভিত্তি সুদৃঢ়ীকরণ ও এর সার্বিক উন্নয়নে অবদানের জন্য আল মুইজকে শ্রেষ্ঠ ফাতেমি খলিফা বলা হয়।‌আল মুইজ মিসরে ফাতেমি শাসন সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন এবং শক্ত হস্তে সব অভ্যন্তরীণ কোন্দল দমন করে। সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনেন। তার সময়ে মিসর, মরক্কোসহ বিভিন্ন দেশ বিজিত হয়। তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, সাংগঠনিক ক্ষমতা ও অমিত কর্মোদ্যমের ফলে ফাতেমি খিলাফত একটি বিশাল সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত হয়। এ কারণেই তাকে শ্রেষ্ঠ ফাতেমি খলিফা বলা হয়।

প্রশ্ন-১২. ‘আল কাহিরা’ বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো। ঢাকা বোর্ড ২০১৭)

উত্তর; ‘আল কাহিরা’ হলো খলিফা আল মুইজের শাসনামলে (১৫২-৯৭৫ খ্রি.) মিসরে প্রতিষ্ঠিত ফাতেমি খিলাফতের রাজধানী। আল কাহিরা অর্থ ‘বিজয়ী’। ফাতেমি খলিফা আল মুইজের সেনাপতি জওহর ৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকার মিসর জয় করেন। বিজয়ের স্মারক হিসেবে তিনি তৎকালীন মিসরের রাজধানী ফুসতাতের উপকণ্ঠে একটি নতুন নগরী প্রতিষ্ঠা করেন। এর নাম দেওয়া হয় “আল কাহিরা’। কাহিরা শব্দ থেকেই কায়রো (বর্তমান মিসরের রাজধানী) নামের উৎপত্তি। ৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে আল কাহিরা বা কায়রো রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে।

প্রশ্ন-১৩. আল মুইজের মিসর বিজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: আল মুইজের মিসর বিজয়ের কারণ হলো মিসরের আমির-উমরাহদেরকে সাহায্য করা এবং নিজ লক্ষ্য পূরণ করা। আল মুইজের মিসর বিজয়ের প্রাক্কালে মিসরের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। ইখশিদ বংশীয় শাসনকর্তা কাফুর এ সময় মিসর শাসন করতেন। তার ২০ বছরের কুশাসনে মিসর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত দুর্বল ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এ সময় মিসরের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা খলিফা আল মুইজের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। এবং তাকে মিসর দখল করার আহ্বান জানান। এছাড়া প্রচুর সম্পদে পরিপূর্ণ মিসর জয় করা তার জীবনের একটি লক্ষ্য ছিল। এসব কারণে খলিফা আল মুইজ মিসর জয় করেন।

প্রশ্ন-১৪. ফাতেমি শাসনামলে ক্রিট দ্বীপ মুসলমানদের হস্তচ্যুত হয় কেন?

উত্তর: ফাতেমি শাসনামলে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের কারণে ক্রিট দ্বীপ মুসলমানদের হস্তচ্যুত হয়। মুসলিম স্পেনের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক তৃতীয় আবদুর রহমান যখন খ্রিষ্টানদের সাথে তুমুল যুদ্ধে ব্যস্ত, তখন ফাতেমি খলিফা আল মুইজের সেনাপতি জওহর মৌরিতানিয়া দখল করেন। এ সংবাদে বিচলিত হয়ে তৃতীয় আবদুর রহমানের নির্দেশে স্পেনের নৌবহর মুইজের মরক্কোগামী জাহাজ আক্রমণ করে। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মুইজ সিসিলির অধিপতি হাসান বিন আলীকে স্পেনীয় নৌবন্দর আলমেরিয়া আক্রমণের নির্দেশ দেন। মুসলমানদের এ অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের সুযোগে ৯৬১ খ্রিস্টাব্দে গ্রিকরা ক্রিট দ্বীপ দখল করে নেয়।

প্রশ্ন-১৫, মাজালিম আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয় কেন?

উত্তর: ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ফাতেমি খলিফা আল মুইজের নির্দেশে প্রধান কাজী আবু হানিফ ইবনে নুমান ‘মাজালিম আদালত’ নামে একটি নতুন আদালত প্রতিষ্ঠা করেন।খলিফা আল মুইজ ন্যায়বিচারক ছিলেন। তার সময়ে প্রধান কাজী ইবনে নুমান সুন্নি মালেকি মাজহাবের অনেক আইন ফাতেমি বিচারব্যবস্থায় প্রবর্তন করেন। বিচারব্যবস্থাকে ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক করার লক্ষ্যে মাজালিম আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। 

প্রশ্ন-১৬, ফাতেমি খলিফা আল মুইজকে পাশ্চাত্যের মামুন বলা হয় কেন?

উত্তর: শিল্প সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদানের জন্য আল মুইজকে পাশ্চাত্যের মামুন বলা হয়। আল মুইলের সময়কাল ছিল মিসরে ফাতেমি শাসনকালের স্বর্ণযুগ। আল মুইজ মিসরে ফাতেমি শাসন সুদৃঢ় করে রাজ্যের প্রভুত উন্নতি সাধনে মনোনিবেশ করেন এবং সমৃদ্ধশালী একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, বিজ্ঞান মনস্কতা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতি উদার পৃষ্ঠপোষকতার জন্য সৈয়দ আমীর আলী তাকে পাশ্চাত্যের মামুন বলে অভিহিত করেছেন।

প্রশ্ন-১৭. জ্ঞান-বিজ্ঞান ও স্থাপত্যশিল্পে খলিফা আল আজিজের অবদান ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: জ্ঞান-বিজ্ঞান ও স্থাপত্যশিল্পের বিকাশে খলিফা আল আজিজ অসামান্য অবদান রাখেন। খলিফা আল আজিজ নিজে একজন কবি ছিলেন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তিনি মিসরের আল আজহার মসজিদে একটি শিক্ষায়তন যুক্ত করেন। এছাড়াও বহু স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও জন কল্যাণকর কাজ করে। তিনি স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম অনুরাগী ছিলেন। তার সময়ে নির্মিত সোনালি প্রাসাদ, মুস্তাম এবং ঝারাফা কবরস্থানে তার মায়ের কবরের ওপর নির্মিত সুন্দর মসজিদ তার শিল্পানুরাগের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। খলিফা আল আজিজের নির্মিত এ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং স্থাপত্যশির ফাতেমিদের গৌরব ও সুনাম বহুলাংশে বৃদ্ধি করে।

প্রশ্ন-১৮. ‘দারুল হিকমা’ কী? ব্যাখ্যা করো।

 ২০১৮: পি. . . . সি. . বোর্ড ২০১৭: সকল বোর্ড ২০১৬

উত্তর: দারুল হিকমা হলো ফাতেমি খলিফা আল হাকিমের নির্মিত একটি বিজ্ঞানভবন। ফাতেমি খলিফা আল হাকিম ১০০৫ খ্রিস্টাব্দে কায়রোতে বিখ্যাত দারুল হিকমা বা বিজ্ঞানভবন নির্মাণ করেন। এটি বাগদাদের বায়তুল হিকমার অনুকরণে নির্মিত হয়েছিল। এখানে শিয়া ধর্ম বিষয়ে আলোচনা ও গবেষণা হতো। এখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বহু অমূল্য গ্রন্থরাজি সংগৃহীত ছিল। দেশ-বিদেশের বহু প্রখ্যাত পণ্ডিত ব্যক্তি এখানে হাজির হতেন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন আলাপ-আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন।

প্রশ্ন-১৯, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় দারুল হিকমা এর কার্যক্রম কীরূপ ছিল?

উত্তর: শিয়া মতাদর্শ এবং জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে দারুল হিকমার কার্যক্রম ছিল অসাধারণ। দারুল হিকমা অর্থ বিজ্ঞান ভবন। খলিফা আল হাকিম ১০০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রধানত শিয়া মতাদর্শ বিষয়ে আলোচনা ও গবেষণার জন্য এটি নির্মাণ করেন। তবে এ মতাদর্শ ছাড়াও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বহু অমূল্য গ্রন্থরাজি এতে সংগ্রহ করা হয়। দেশ-বিদেশের বহু প্রখ্যাত পণ্ডিত ব্যক্তি এখানে হাজির হতেন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন আলাপ আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্রখ্যাত দার্শনিক ও পদার্থবিজ্ঞানী হাসান ইবনে হায়সাম । জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার উন্নয়ন ও বিকাশে দারুল গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

প্রশ্ন-২০. ফাতেমি খিলাফতের পতন ঘটেছিল কেন?

উত্তর: শাসকদের দুর্বলতা, অভ্যন্তরীণ গোলযোগ এবং দুর্ভিক্ষের কারণে ফাতেমি খিলাফতের পতন ঘটেছিল। খলিফা আল-হাকিমের মৃত্যুর পর যারা খলিফা নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা দুর্বল, অযোগ্য ও ব্যক্তিত্বহীন ছিলেন। তারা তুর্কি, বাবার, নিগ্রোদের অভ্যন্তরীণ গোলযোগ প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাছাড়া শেষ দিকে কয়েক বছর চরম দুর্ভিক্ষে। দেশের আর্থিক বুনিয়াদ ভেঙে পড়েছিল। এ প্রেক্ষিতে ফাতেমি খিলাফতের পতন অনিবার্য হয়ে পড়েছিল।

source: অক্ষর পত্র প্রকাশনী বই

এই কন্টেন্ট এর সারবস্তু গৃহীত হয়েছে © ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

[ad_2]

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url