সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কি ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল?
[ad_1]
সম্প্রতি ” দেখুন — ২০০৬ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভারত সফর করেন। এসময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান।” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০৬ সালে ভারত সফরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাননি বরং রাষ্ট্রপতি ভবনে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতোই (প্রতিমন্ত্রীর অভ্যর্থনা) সেসময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দিল্লি বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ই আহমেদ।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা AP এর ইউটিউব চ্যানেল AP Archive এ ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই Bangladesh PM Zia visits শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদনটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে ২০০৬ সালের ২১ মার্চ বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।
অপরদিকে ভারতের মিনিস্ট্রি অব এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সে ২০০৬ সালের ২২ মার্চ “Joint Press Release, State Visit of Begum Khaleda Zia, Prime Minister of Bangladesh” প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খালেদা জিয়া ২০ মার্চ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত ভারতে সফর করেন।
অর্থাৎ মনমোহন সিংয়ের সাথে খালেদা জিয়ার অভ্যর্থনাটি ছিল তার সফরের দ্বিতীয় দিনের।
পরবর্তীতে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে তাকে সংবর্ধনা সম্পর্কিত তথ্য অনুসন্ধান করে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে ২০০৬ সালের ২১ মার্চ “নয়াদিল্লিতে খালেদা জিয়াকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় সফরে খালেদা জিয়া ভারতের ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ই আহমেদ ও পররাষ্ট্রসচিব শ্যামশরণ।
ছবি শেয়ারিং প্লাটফর্ম গেটি ইমেজেও খালেদা জিয়াকে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ই আহমেদ ও পররাষ্ট্রসচিব শ্যামশরণের অভ্যর্থনা জানানো সম্পর্কিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ খালেদা জিয়া ভারতে পৌঁছানোর পর তাকে বিমানবন্দরে সংবর্ধনা দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না। বরং ভারতের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন পরেরদিন ২১ মার্চ।
অপরদিকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলতি ভারত সফর সংক্রান্ত সংবাদ খুঁজে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তিনি ৫ সেপ্টেম্বর ভারতে পৌঁছানোর পর তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোশ। এসময় উপস্থিত ছিলেন নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান ও ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।
একই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, আগামীকাল মঙ্গলবার গার্ড অব অনারের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিল সংযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সংক্রান্ত দৈনিক কর্মসূচির একটি তালিকা থেকেও এই প্রতিবেদনের তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়।
অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিল্লি বিমানবন্দরে ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোশ স্বাগত জানালেও পরবর্তীতে তাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাবেন।
এছাড়া একইদিনে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোশের স্বাগত জানানো নিয়ে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা শুরু হলে মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানায়, প্রোটোকল অনুযায়ী একজন সফররত সরকারপ্রধানকে যে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়ার কথা, সেটাই শেখ হাসিনাকে দেওয়া হয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার আগের বারের দিল্লি সফরেও (অক্টোবর ২০১৯) বিমানবন্দরে যাননি।
অপরদিকে প্রথম আলোর ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল “প্রটোকল ভেঙে হাসিনাকে স্বাগত মোদির” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৌঁছালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ভেঙে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে ছিলেন।
অপরদিকে প্রথম আলোর ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল “প্রটোকল ভেঙে হাসিনাকে স্বাগত মোদির” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৌঁছালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ভেঙে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে ছিলেন।
উপরিউক্ত তথ্য সমূহ বিশ্লেষণ করে বুঝা যায়, ভারতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রাথমিক অভ্যর্থনা দেন ভারত সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। যেটি ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রটোকল।
মূলত, সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিল্লি বিমানবন্দরে ভারতীয় রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক
অভ্যর্থনা জানানোকে কেন্দ্র করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ২০০৬ সালের ভারত সফরে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক রাষ্ট্রপতি ভবনে অভ্যর্থনার একটি ভিডিওকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, শেখ হাসিনার মতোই (প্রতিমন্ত্রীর অভ্যর্থনা) সে সময় ভারত সফরে খালেদা জিয়াকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন দেশটির তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ই আহমেদ। উল্লেখ্য, চলমান ভারত সফরে আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি ভবনে শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সময়ে ভারতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় সফর ও অভ্যর্থনা সম্পর্কে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিনকে প্রটোকল মেনে সাদরে গ্রহণ করেন ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেলকে প্রটোকল অনুযায়ী সাদরে গ্রহণ করেন ভারতের একজন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এর ভারতে একমাত্র দ্বিপাক্ষিক সফরে তাকে প্রটোকল মেনে সাদরে গ্রহণ করা হয়েছিলো। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে প্রটোকল মেনেই সাদরে গ্রহণ করেন ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিওকে প্রটোকল মেনে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
Also Read: পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া স্থাপন করেননি
সুতরাং, ২০০৬ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফরকালে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বিমানবন্দরে স্বাগত জানানোর দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
1. নয়াদিল্লিতে খালেদা জিয়াকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে
2. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন
3. প্রটোকল ভেঙে হাসিনাকে স্বাগত মোদির
4. Getty Image: Bangladesh Prime Minister Begum Khaleda
5. Daily Samokal: নয়া দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা
6. Bangla Tribune: প্রোটোকল মেনেই দিল্লিতে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা
[ad_2]