ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্র HSC: পঞ্চম অধ্যায় সকল অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
[ad_1]
ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্র HSC পঞ্চম অধ্যায় সকল অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়ার হয়েছে। পঞ্চম অধ্যায় নাম হচ্ছে আব্বাসি খিলাফত।
প্রশ্ন-১. আব্বাসিদের পরিচয় দাও। রা, য, ব, বো. ১৯: রা,; কু; চ, ব, বো. ১৮)
উত্তর: আব্বাসিরা মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশের হাশেমি শাখা থেকে উদ্ভূত। মহানবি (স)-এর পিতৃব্য আল আব্বাস-বিন আবদুল মুত্তালিব-বিন হাশেমের নাম থেকে আব্বাসি বংশের নামকরণ করা হয়েছে। আল আব্বাস তার চার পুত্রকে রেখে ৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। তারা উমাইয়া গোত্রের মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে হাশেমি গোত্রের হযরত আলী (রা)-এর পক্ষাবলম্বন করেন। আত্মীয়তার দিক থেকে উমাইয়াদের তুলনায় মহানবি (স) এর নিকটতর হওয়ায় তারা নিজেদেরকে মুসলিম খিলাফতের বৈধ দাবিদার বলে দাবি করত।
প্রশ্ন-২. কাকে এবং কেন আস-সাফফাহ বলা হয়? / সকল বোর্ড ২০১৬/
উত্তর: নৃশংসতার জন্য খলিফা আবুল আব্বাসকে আস-সাফ্ফাহ বলা হয়।
আব্বাসি শাসনকে শঙ্কামুক্ত করতে আবুল আব্বাস ক্ষমতায় আরোহণ করে উমাইয়া নিধন নীতি গ্রহণ করেন। ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জুন তিনি ফিলিস্তিনের আবু ফ্রুটস নামক স্থানে উমাইয়া বংশের ৮০ জন লোককে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেন। বসরাতেও তিনি এরূপ হত্যাযজ্ঞ চালান। তার আদেশে উমাইয়াদের মৃতদেহ কবর থেকে উঠিয়ে হাড়গুলো ভস্মীভূত করে বায়ুতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এ নৃশংস চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য তাকে আস-সাফফাহ উপাধি দেওয়া হয়।
প্রশ্ন-৩. আবু আব্বাস-আস-সাফফাহ উমাইয়া নিধন নীতি গ্রহণ করেছিলেন কেন?
উত্তর: আবুল আব্বাস-আস-সাফ্ফাহ উমাইয়া বংশীয়দের ধ্বংস সাধনের লক্ষ্যে উমাইয়া নিধন নীতি গ্রহণ করেন। উমাইয়া এবং হাশেমিদের দ্বন্দ্ব ছিল খুলাফায়ে রাশেদিনের সময় থেকেই। তাই হাশেমি বংশীয় আবুল আব্বাস খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়েই উমাইয়া নিধন নীতি গ্রহণ করেন। আস-সাফফাহ ৭৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুন ফিলিস্তিনের আবু ফুটস- এ উমাইয়া বংশের ৮০ জন লোককে আমন্ত্রণ করে এনে, সবাইকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেন। বসরাতেও অনুরূপ হত্যাযজ্ঞ সাধিত হয়। আস-সাফ্ফাহর আদেশে মৃত উমাইয়াদের দেহাবশেষ কবর থেকে উঠিয়ে নিয়ে হাড়গুলো ভস্মীভূত করে বায়ুতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
প্রশ্ন-৪. রাওয়ান্দিয়া সম্প্রদায় কারা? /ডা. বো.. দি. বো, কু, বো, চ. বো, সি. বো. ২০১৯/
উত্তর: রাওয়ান্দিয়া সম্প্রদায় হলো একদল উগ্রপন্থি পারসিক যারা আব্বাসি খলিফা আবু জাফর আল মনসুরকে “আল্লাহর অবতার’ বলে প্রচার করেছিল। খলিফা আবু জাফর আল মনসুরের অতি অনুগত একটি দল তাকে ‘খাদ্য ও পানীয় দাতা ঈশ্বর’ বলে একটি মতবাদ প্রচার করতে থাকে। তাদের এ অনভিপ্রেত ও নাস্তিকতাপূর্ণ উন্মাদনায় ধর্মপরায়ণ ব্যক্তিরা ক্ষুদ্র হয়ে ওঠে। এতে আল মনসুর তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করেন । আর এ দলটি তাদের ধর্মীয় মতবাদের জন্য ইতিহাসে ‘রাওয়ান্দিয়া’ সম্প্রদায় নামে অভিহিত।
প্রশ্ন-৫. আবু জাফর আল মনসুরকে আব্বাসি বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় কেন ?
উত্তর: সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করায় আবু জাফর আল মনসুরকে আব্বাসি বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় । আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ আব্বাসি বংশের ভিত প্রতিষ্ঠিত করলেও তিনি সাম্রাজ্যকে সুসংঘবদ্ধ কাঠামো দিতে পারেননি। কিন্তু খলিফা আল মনসুর সিংহাসনে বসে অক্লান্ত পরিশ্রম, অদম্য সাহস, দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞা দ্বারা ভেতরে বাইরের সকল বিদ্রোহ দমন করে সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় করেন। তাই তাকে আব্বাসি বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
প্রশ্ন-৬. আবু মুসলিম খোরাসানি সম্পর্কে যা জান লেখো। দি… চ… সি, ব. বো. ১৭/
উত্তর: আবু মুসলিম খোরাসানি ছিলেন মুসলিম বংশোদ্ভূত একজন ইস্পাহানি (পারস্য বা ইরানের লোক)। আব্বাসি শাসনামলে তিনি খোরাসানের শাসনকর্তা ছিলেন। আব্বাসি বংশের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। আবু মুসলিমের বীরত্ব, কর্মতৎপরতা তাকে বেশ জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল। অন্যদিকে এগুলোই ছিল আবু মুসলিমের পতনের মূল কারণ। আবু মুসলিমের যোগ্যতা সম্পর্কে সৈয়দ আমীর আলী বলেন, ‘তাহার অপরিবর্তনীয় শিষ্টাচার ও সৌজন্য শত্রুগণকে অনুরঞ্জিত করত এবং সমর্থক দল লাভে সহায়তা করত। আব্বাসি শাসন শক্তিশালীকরণ ও বিদ্রোহীদের দমনে আৰু মুসলিম খোরাসানির অবদান অপরিসীম। তার দক্ষতায় ঈর্ষান্বিত এবং আশঙ্কাগ্রস্ত হয়ে খলিফা আল মনসুর তাকে হত্যা করেন।
প্রশ্ন-৭. আবু মুসলিম খোরাসানিকে কেন হত্যা করা হয়?
উত্তর: আব্বাসি যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগঠক আবু মুসলিম খোরাসানি ব্যাপক ক্ষমতা এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এটি ছিল মূলত তাকে হত্যার কারণ। খোরাসানে আবু মুসলিম-এর প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এমনকি সেখানে একদল লোক তাকে নবির মর্যাদা দান করেন। তিনি যেমন আব্বাসি বংশকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তেমনি নিতান্ত অঙ্গুলি সংকেতে এর ধ্বংসসাধন করতেও সক্ষম ছিলেন। তার অপরিসীম ক্ষমতা, জনপ্রিয়তা, রণকৌশল, দৃঢ়তা ইত্যাদি গুণের মধ্যে খলিফা মনসুর আব্বাসি খিলাফাতের ভবিষ্যৎ বিপদ আশঙ্কা করেছিলেন। ফলে ষড়যন্ত্র করে সকলের অলক্ষে তার প্রাণনাশ করেন। নিজের বংশকে কণ্টকহীন করার উদ্দেশ্যই মনসুর এই হীন পন্থা অবলম্বন করেছিলেন।
প্রশ্ন-৮. আলী বংশীয়দের প্রতি খলিফা মনসুরের দুর্ব্যবহারের কারণ ব্যাখ্যা করো। (সকল বোর্ড ২০১৫/
উত্তর: খলিফা মনসুর আলী বংশীয়দের আব্বাসি খিলাফতের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতেন। তাই তিনি তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। হযরত আলী (রা) ও ফাতিমা (রা)-এর বংশধরেরা আব্বাসি বংশের উত্থানের সময় যথাযথ সাহায্য করলেও খলিফা আল মনসুর তাদেরকে সুনজরে দেখেননি। বরং খিলাফতের সম্ভাব্য দাবিদার ও প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে আল মনসুর তাদেরকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর হন। তাছাড়া আলীর বংশধরদের প্রতি জনসাধারণের অসীম ভক্তি ও শ্রদ্ধার জন্য খলিফা মনসুর বিচলিত হন এবং তাদের ধ্বংস সাধনে তৎপর হয়ে ওঠেন। যার ফলে তিনি আলী বংশীয়দের প্রতি দুর্ব্যবহার করেন।
প্রশ্ন-৯, নহরে জুবাইদা বলতে কী বোঝায়? / রা: য; ব. বো. ১৯, ঢা.. দি. সি. য. বো. ১৮/
উত্তর: পবিত্র হজব্রত পালন করতে আসা লোকজনকে পথে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করে তাদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য আব্বাসি খলিফা হারুন-অর-রশিদের স্ত্রী জুবাইদার উদ্যোগে যে খালটি খনন করা হয়, তাই নহরে জুবাইদা নামে পরিচিত। মরুভূমির দেশ আরবের মক্কা নগরী মুসলিম জাতির জন্য সবচেয়ে পবিত্র স্থান। এখানে শত শত বছর ধরেই হজ মৌসুমে পবিত্র হজব্রত পালনের জন্য বহু মুসলিমের আগমন ঘটে। মধ্যযুগে সেই প্রতিকূল মরু অঞ্চলে কিন্তু এ বিপুলসংখ্যক লোকের অজু, গোলস কিংবা পানীয় জলের কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থা ছিল না। দূরদূরান্ত থেকে আসা হাজিদেরকে অসহনীয় দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হতো। তাদেরকে এ দুর্ভোগের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য জনহিতৈষী ও প্রজাবৎসল খলিফা হারুন-অর-রশীদের স্ত্রী জুবাইদা ৮০২ খ্রিষ্টাব্দে ১৫,০০,০০০ দিনার ব্যয়ে ফোরাত নদীর তীর থেকে মক্কা ও মদিনা পর্যন্ত নহরে জুবাইদা খালটি খনন করেন।
প্রশ্ন-১০. খলিফা হারুন-অর-রশীদকে ‘রূপকথার নায়ক’ বলা হয় কেন?
উত্তর: আরব্যোপন্যাসের অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র হওয়ার কারণে খলিফা হারুন-অর-রশীদকে রূপকথার নায়ক বলা হয়। খলিফা হারুন-অর-রশীদের শাসনামলে ‘আলিফ লায়লা ওয়ালায়লা’ বা ‘হাজার এক রাত্রি’ নামে একটি দীর্ঘ চিত্তাকর্ষক কাহিনি লেখা হয়। এটির ভিত্তি প্রাচীন পারস্যসহ বিভিন্ন দেশের প্রচলিত লোক কাহিনি। বাংলা ভাষায় এ কাহিনি “আরব্যোপন্যাস নামেও পরিচিত। এতে কাল্পনিক চরিত্র আলাদিন, আলীবাবা ও সিন্দাবাদের পাশাপাশি আব্বাসি খলিফা হারুনকে কেন্দ্র করেও কিছু কাহিনি রয়েছে। তার সময়ে বাগদাদ নগরী গল্পের মতোই সমৃদ্ধি অর্জন করেছিল। এটিই সেখানে আরব্যোপন্যাস সংকলিত হওয়ার মূল কারণ।
প্রশ্ন-১১. বার্মাকিদের পতনের কারণ কী? ব্যাখ্যা করো।
উওর: আব্বাসি খলিফা হারুন-অর-রশীদের রোষানলে পড়ে বার্মাকি পরিবারের পতন ঘটে। বার্মাকি বংশের অপরিসীম প্রভাবে তাদের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ লোকদের নানা সন্দেহ ও নানারকম নেতিবাচক কথায় প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে খলিফা হারুন তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হন। হারুনের নির্দেশে জাফরের শিরশ্ছেদ, বৃদ্ধ ইয়াহিয়া, ফজল, মুসা ও মুহাম্মদকে রাক্কায় কারারুদ্ধ করা হয়। তাছাড়া তাদের সমুদয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করায় বার্মাকি বংশের পতনের দরজা খুলে যায়।
প্রশ্ন-১২. বায়তুল হিকমা বলতে কী বোঝায়? / রা. মি., কু, চ.. যা, সি. খ. বো. ১৭/
উত্তর: আব্বাসি খলিফা আল মামুনের প্রতিষ্ঠিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা জ্ঞানগৃহ হলো বায়তুল হিকমা । বায়তুল হিকমা কথাটির অর্থ জ্ঞানগৃহ । খলিফা আল মামুন ৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে বাগদাদে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। বায়তুল হিকমা গ্রন্থাগার, শিক্ষায়তন ও অনুবাদ বিভাগ এ তিনভাগে বিভক্ত ছিল। সুপণ্ডিত হুনায়ন বিন-ইসহাক এর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হয়েছিলেন। এখানে গ্যালেন, ইউক্লিড, টলেমি, পল প্রমুখ ইউরোপীয় মনীষীদের প্রাচীন গ্রন্থাবলি অনুবাদ করা হতো এবং অনুবাদকারীকে গ্রন্থের ওজনে স্বর্ণমুদ্রায় পারিশ্রমিক দেওয়া হতো।
প্রশ্ন-১৩. খলিফা আল মামুনের রাজত্বকালকে ইসলামের অগাস্টান যুগ বলা হয় কেন?
উত্তর: শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অসাধারণ উন্নতি লাভের কারণে খলিফা আল মামুনের রাজত্বকালকে ইসলামের অগাস্টাস যুগ বলা হয়। রোমান সম্রাট অগাস্টানের শাসনামলের তার সাম্রাজ্যে যেমন অগ্রগতি ঘটেছিল খলিফা আল মামুনের শাসনামলে বাগদাদও তেমনিভাবে শিক্ষা ও সংস্কৃতির পাদপীঠে পরিণত হয়েছিল। মামুনের শাসনকাল ছিল আব্বাসি তথা আরবদের জন্য অলংকারস্বরূপ। শিক্ষা-জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিস্তার ও বিকাশে আল-মামুনের অবদান ছিল অপরিসীম। তার শাসনকালে সাম্রাজ্যের সর্বত্র সুখ, শান্তি ও শৃঙ্খলা বিরাজ করত। এ কারণে আল মামুনের শাসনামলকে ইসলামের অগাষ্টান যুগ বলা হয়।
প্রশ্ন-১৪. গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের পরিচয় দাও।
উত্তর: সেলজুক সুলতান মালিক শাহের রাজত্বকালে আল হাসান আল সাবাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হত্যাকারী সম্প্রদায়ই গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় নামে পরিচিত। হাসান আল সাবাহ মালিক শাহের উজির নিজামুল মূলকের সহপাঠী ছিলেন। প্রথম জীবনে তিনি মালিক শাহের অধীনে চাকরি করেন কিন্তু সহপাঠী নিজামের উচ্চপদ লাভে ঈর্ষান্বিত হয়ে সেলজুক রাজ্যে সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য একটি হত্যাকারী সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই ইতিহাসে গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় নামে পরিচিত। এ সম্প্রদায় পারস্যের উত্তর-পশ্চিমে আলামত পর্বত শিখরে একটি সুরক্ষিত দুর্গ নির্মাণ করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করত।
প্রশ্ন-১৫. জালালি পঞ্জিকা বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর: উমর খৈয়ামের নেতৃত্বে নিশাপুরের জ্যোতির্বিদরা চান্দ্র মাসের পরিবর্তে সৌর মাস অনুযায়ী কাল গণনার প্রথা প্রচলন করেন যা, জালালি পঞ্জিকা হিসেবে পরিচিত। 1 সেলজুক সুলতান মালিক শাহের সময়ে প্রচলিত গণনাপদ্ধতির যাবতীয় ভুল সংশোধন করে একটি নতুন পঞ্জিকা তৈরি করা হয়। সুলতানের নামানুসারে এর নামকরণ হয় জালালি পঞ্জিকা।
প্রশ্ন-১৬. হাসান বিন সাবাহ ইতিহাসে পর্বতের বৃদ্ধ মানব নামে পরিচিত কেন ?
উত্তর: হাসান বিন সাবাহ পর্বতশিখরের একটি সুরক্ষিত দুর্গে বাস করতেন বলে তিনি পর্বতের বৃদ্ধ মানব নামে পরিচিত। সেলজুক সুলতান মালিক শাহের রাজত্বকালে ইসলামের ইতিহাসের হত্যাকারী সম্প্রদায় বা গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। আর এ গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হাসান বিন সাবাহ। তিনি ইরানের উত্তর-পশ্চিমে আলামুত পর্বতশিখরে একটি সুরক্ষিত দুর্গে বাস করতেন এবং সেখান থেকেই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করতেন। পর্বতে বাস করার জন্য হাসান বিন সাবাহ পর্বতের বৃদ্ধ মানব নামে পরিচিত।
প্রশ্ন-১৭. ক্রুসেড বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ক্রুসেড বলতে মধ্যযুগে খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের মধ্যে সংঘটিত দীর্ঘকালীন ধর্মযুদ্ধকে বোঝায়। একাদশ থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় তিনশত বছর ধরে ঈর্ষাপরায়ণ ও বিক্ষুব্ধ খ্রিস্টান জগৎ ধর্মের ডাকে বক্ষে ব্রুস চিহ্ন ধারণ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ পরিচালনা করে, তাই ইতিহাসে ক্রুসেড নামে পরিচিত। ক্রুসেড শব্দটির অর্থ ধর্মযুদ্ধ । খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় প্রতীক ক্লস থেকে ‘ক্রুসেড’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। তৎকালীন মুসলিম এশিয়ার বিরুদ্ধে খ্রিস্টান ইউরোপের সীমাহীন হিংসাবিদ্বেষ প্রকাশিত হয়েছে ক্রুসেড নামক এ ধর্মযুদ্ধের মাধ্যমে।
প্রশ্ন-১৮. ক্রুসেডের ধর্মীয় কারণ কী ছিল? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মুসলিম, খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের পবিত্র ভূমি জেরুজালেমের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রতাশা ক্রুসেডের ধর্মীয় কারণ ছিল। ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে খলিফা হযরত ওমর (রা) এর সময় আমর ইবন আল আস জেরুজালেম দখল করেন। এর ফলে খ্রিষ্টান জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ফাতেমি খলিফা আল হাকিম ১০০৯ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেমে খ্রিষ্টানদের পবিত্র সমাধি ও গির্জা ধ্বংস করলে তারা খুবই বিক্ষুব্ধ হয়। ফলে খ্রিস্টানরা জেরুজালেমের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ক্রুসেডে (ধর্মযুদ্ধ) যোগদান করে।
প্রশ্ন-১৯. সালাহউদ্দিন আইয়ুবি সম্পর্কে টীকা লেখো।
উত্তর: সালাহউদ্দিন আইয়ুবি হলেন মিসর ও সিরিয়ায় আইয়ুবি বংশের প্রতিষ্ঠাতা ও তৃতীয় ক্রুসেডের নেতা ।
টাইগ্রিস নদীর তীরে অবস্থিত তিকরিতে ১১৩৭ সালে সালাহউদ্দিন আইয়ুবি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন কুর্দি নেতা আইয়ুব। সালাহউদ্দিন আইয়ুবি ১১৬৯ খ্রিস্টাব্দে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তিনি ১১৭৪ খ্রিস্টাব্দে ফাতেমি বংশের ধ্বংসস্তূপের ওপর আইয়ুবি বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। ক্রুসেডারদের (১১৮৯-১১৯২) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মুসলমানদের রক্ষায় তিনি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখেন।
• আব্বাসি খিলাফত পতনের প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আব্বাসি খিলাফতের পতনের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল দুর্ধর্ষ মোঙ্গল নেতা হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণ ১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে হালাকু খান বাগদাদ আক্রমণ করেন। মোঙ্গল বাহিনী ৪০ দিন ধরে অবরোধ চালায় এবং তারা বিশাল পাথরের খন্ড ও আগুনের গোলা নিক্ষেপের মাধ্যমে নগরীর দেওয়াল ভেঙে ফেলে। নিরুপায় খলিফা মুসতাসিম হালাকু খানের কাছে আত্মসমর্পণ করে প্রাণভিক্ষা চান। কিন্তু হালাকু খান অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে খলিফা ও বাগদাদের ২০ লক্ষ অধিবাসীর ১৬ লক্ষকেই হত্যা করে।
প্রশ্ন-২১. দিওয়ান আল রাসায়েল কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: উমাইয়া শাসনব্যবস্থায় সরকারি পত্র আদান-প্রদানের জন্য যে বিভাগ কাজ করত সেটিই দিওয়ান আল রাসায়েল নামে পরিচিত। উমাইয়া শাসনামলে দিওয়ান আল রাসায়েল বা সরকারি পত্র বিনিময় বিভাগের প্রতিষ্ঠা হয়। তবেও আব্বাসি শাসনামলে এসে এটি আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। এ বিভাগ রাজকীয় ফরমান, নিযুক্তিপত্র, বিশেষাধিকার পত্র, রাজনৈতিক পত্রাদি রচনা করত এবং খলিফা ও উজিরের অনুমোদন নিয়ে প্রয়োজনীয় স্থানে প্রেরণ করত। বিভাগটির প্রধানকে বলা হয় ‘সাহিব দিওয়ান আল রাসায়েল’।
প্রশ্ন-২২. আব্বাসিদের শাস্তিবাদী বলা হয় কেন?
উওর: সম্প্রসারণবাদী নীতির পরিবর্তে শান্তিবাদী নীতিতে অধিক গুরুত্বারোপ করার কারণে আব্বাসিদের শান্তিবাদী বলা হয়। উমাইয়ারা ছিল ব্যাপক সম্প্রসারণবাদী। অন্যদিকে আব্বাসিরা তাদের গৌরবময় যুগেও সম্প্রসারণবাদী নীতি গ্রহণ রেনি। তারা রাজ্যের সীমান্ত রক্ষার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন। এ কারণে আব্বাসিদের কয়েক দফা বাইজান্টাইনদের সাথে শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হলেও কখনো আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায়নি। এভাবে সম্প্রসারণবাদী “তি পরিহার করে শান্তির নীতি গ্রহণ করায় তাদেরকে শান্তিবাদী বলা হয়।
২৩. দিওয়ান আল জুদ কী? ব্যাখ্যা করো।
উওর: ইসলামি শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী গঠন এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে বিভাগ কাজ করত সেটিই দিওয়ান, শাল জুনদ নামে পরিচিত। দিওয়ান আল জুনদের ওপর ন্যস্ত ছিল। খলিফা হযরত ওমর (রা) দিওয়ান আল জুনদ বিভাগের সৃষ্টি করলেও আব্বাসি শাসনামলে এসে এর ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটে । কেন্দ্রীয় সরকারের সৈন্য নিয়োগ, সৈন্যদের বেতন ও ভাতা বণ্টন এবং যাবতীয় সামরিক চাহিদা পূরণের দায়িত্ব এ দেওয়ান আল জুন দের উপর ন্যস্ত ছিল।
প্রশ্ন-২৪, খলিফাকে আব্বাসি শাসনব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র বলা হয় কেন?
উত্তর: খলিফা সাম্রাজ্যের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার কারণে তাকে আব্বাসি শাসনব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। আব্বাসি শাসনব্যবস্থায় খলিফা ছিলেন রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার উৎস। রাষ্ট্রের শাসনসংক্রান্ত সকল গুরুত্বপূর্ণ আদেশ নির্দেশ মূলত তার মাধ্যমেই আইনে পরিণত হতো। রাজনৈতিক প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রের সকল প্রকার আর্থ-সামাজিক, বৈদেশিক, রাজনৈতিক কার্যাবলি তার নির্দেশেই পরিচালিত হতো। আর এ সমস্ত কারণেই খলিফাকে আব্বাসি শাসনব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র বলা হয়।
source: অক্ষর পত্র প্রকাশনী বই
এই কন্টেন্ট এর সারবস্তু গৃহীত হয়েছে © ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
[ad_2]